এ বছর জেলায় আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখ টন নির্ধারণের কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
Published : 12 Nov 2023, 08:21 AM
রংপুরে এবার আমনসহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা উৎসব। আর কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও শ্রমিকরা।
কৃষকরা বলছেন, এ বছর কৃষি উপকরণের অতিরিক্ত দাম এবং আমন চাষের শুরুতে অনাবৃষ্টির পরও ফলন ভালো হয়েছে। এখন অপেক্ষা ন্যায্য মূল্যের। এবার জেলায় আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় পাঁচ লাখ টন নির্ধারণের কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
শনিবার সরেজমিনে রংপুর সদর উপজেলার মাহিগঞ্জ, নব্দীগঞ্জ, দেউতি বাজার, মহব্বত খা, চিলমন, রাজেন্দ্রপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক।
দেউতি বাজার এলাকার কৃষক মোকছেদুল রফিকুল ইসলাম ও আদম মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এবার আমন চাষের শুরুতেই বৃষ্টি না হলেও পুরো মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। এ ছাড়া ক্ষেতে পোকার আক্রমণও কম ছিল।
যেকোনো বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে; তবে ফসলের আশানুরূপ দাম পাওয়া গেলে সব ঋণ মিটিয়ে লাভের আশা করছেন কৃষকরা।
নব্দীগঞ্জ এলাকার কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, আমন কাটা-মাড়াই ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষি শ্রমিকদেরও। অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি মজুরি দিয়েও ধানা কাটা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
কৃষকরা জানান, কাটা-মাড়াই থেকে শুরু করে গোলায় ধান তুলে দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মজুরি গুণতে হচ্ছে তাদের। আবার অনেকে বিঘা চুক্তিতে ধান কাটছেন। বিঘা প্রতি তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা মজুরি নিচ্ছেন শ্রমিকরা।
ধান কাটা-মাড়াইয়ে কাজ করা আবুল, পলাশ, ফজলু, সামসুসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, কিছুদিন আগেও কাজকর্ম ছিল না। ধান কাটা শুরুর পর থেকে প্রতিদিন কাজ পাচ্ছেন তারা।
এদিকে কৃষক নেতারা বলছেন, কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির ফলে ধান চাষে খরচ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে ধানের সঠিক দাম নিশ্চিত করা না গেলে লোকসানে পড়বেন কৃষক।
রংপুর কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক পলাশ কান্তি নাগ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশের অর্থনীতি কৃষির ওপর দাঁড়িয়ে থাকলেও কৃষকরা সবসময় অবহেলিত। কষ্ট করে ফসল ফলালেও ন্যায্য মূল্য পান না কৃষক। সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিলেও কৃষকদের বিষয়ে তেমন একটা আগ্রহ দেখান না।”
চলতি আমন মৌসুমে ৩৩ শতাংশ প্রণোদনায় কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টির কারণে চাষে কিছুটা সমস্যা হলেও শেষ দিকে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। ধান গাছে সালোকসংশ্লেষণ বেশি হওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে।
এবার জেলায় এক লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে; আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় পাঁচ লাখ টন নির্ধারণের কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।