কুমিল্লার দাউদকান্দিতে যুবলীগ নেতাকে হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া তিন বোরকাধারীর মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
মঙ্গলবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-১১’র কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
গ্রেপ্তার দেলোয়ার হোসেন দেলুর (৩২) বাড়ি তিতাস উপজেলার বড়গাজীপুর গ্রামে। তার বিরুদ্ধে দুইটি হত্যাসহ ছয়টি মামলা রয়েছে।
বুধবার সকালে সিপিসি-২ কুমিল্লার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১’র কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাকিব জানান, যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে (৪০) হত্যায় বোরকা পরে সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিলেন দেলোয়ার হোসেন দেলু।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দেলু জানিয়েছেন- তিনি ছাড়া সরাসরি হত্যায় অংশ নেওয়া বাকি দু'জন হলেন- কালা মানির ও আরিফ হোসেন। কিলিং মিশন শেষে অস্ত্রগুলো চান্দিনার এক ব্যক্তির কাছে রেখে তারা বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন।”
মনির ও আরিফ জামাল হোসেন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
সংবাদ সম্মেলনে মেজর সাকিব আরও জানান, খুনিদের সহায়তার অভিযোগে সহিদুল ইসলাম ওরফে সাদ্দাম মাস্টার (৩৩) নামে এক ব্যক্তিকে তিতাস উপজেলার গাজীপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ছাড়া চান্দিনায় যে ব্যক্তির কাছে অস্ত্র রেখে যাওয়া হয় তাকে শনাক্তসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
এদিকে, আলাদা সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান জানান, হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “জেলার চান্দিনায় অভিযান চালিয়ে একটি স্কুল ব্যাগের ভেতর থেকে দুটি অত্যাধুনিক পিস্তল, একটি রিভলবার, ২৪টি গুলি, হিজাব ও ডেনিম প্যান্ট পাওয়া যায়। এ সময় মাজহারুল ইসলাম সৈকত নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় কুমিল্লা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি রাজেশ বড়ুয়া বাদী হয়ে চান্দিনা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেছেন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, “অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার মাজহারুল ইসলাম সৈকতের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।”
গত ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে দাউদকান্দির গৌরীপুর পশ্চিম বাজার ঈদগাহ এলাকার মসজিদ গলিতে জামাল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে বন্দুকধারীরা। জামাল তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের দুইদিন পর ২ মে রাত সাড়ে ১১টায় জামালের স্ত্রী পপি আক্তার বাদী হয়ে দাউদকান্দি থানায় নয় জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আট জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে এই হত্যার সময়ের কয়েকটি সিসিটিভি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় জামাল হোসেন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া তিন দুর্বৃত্তের সকলেই ছিল বোরকা পরা। দশ সেকেন্ডের মধ্যে তারা পরপর তিনটি গুলি চালিয়ে জামালের মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।
র্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জামাল হোসেন হত্যার ঘটনায় গত ৬ মে ঢাকার রায়েরবাগ এলাকা থেকে মামলার ৪ নম্বর আসামি শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার (৪০) ও মিরপুর থেকে ৩ নম্বর আসামি মো. ইসমাইল (৩৬) এবং চট্টগ্রাম থেকে ৭ নম্বর আসামি শাহ আলম ওরফে পা কাটা আলমকে (৩৬) গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান।
একই সময়ে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে রয়েছেন- হত্যাকারীদের বহন করা গাড়িচালক তিতাস উপজেলার লালপুর গ্রামের মো. সুমন হোসেন (২৭), একই উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের মো. রবি (৩৩) ও মো. শাহপরান (৩৪)।
এদের বিরুদ্ধে হত্যায় সরাসরি জড়িতদের পরিবহন, ভিকটিমের অবস্থান ও বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দেওয়া এবং আসামিদের পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে।
র্যাব আরও জানিয়েছে, মামলার এজাহারভুক্ত ৯ আসামির মধ্যে ১ নম্বর আসামি সুজন (৩২) ও ২ নম্বর আসামি আরিফ (২৮) নেপালে, ৪ নম্বর আসামি বাদল (৪৫) দুবাইয়ে, ৬ নম্বর আসামি শাকিল (৩৫) ভারতে, ৮ নম্বর আসামি অলি হাসান (৩৯) সৌদি আরবে এবং ৯ নম্বর আসামি কালা মনির (৪২) অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে আছেন।
আরো পড়ুন: