অল্প দিনে বেশি ফলনের কারণে চাষিরা এটিকে ‘লাভের ফসল’ হিসেবে দেখছেন।
Published : 15 Jan 2024, 01:02 PM
যশোরের শার্শা উপজেলায় গত ছয় বছরে ৬ গুণ বেড়েছে সরিষার চাষ।
চলতি মৌসুমে উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বেড়ে ওঠা গাছ আর ফুল দেখে অধিক ফলনের স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক।
স্থানীয় বাজারে গত বছর সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়েছেন বলে কৃষি বিভাগ মনে করছে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, “ভোজ্য তেলের আমদানি কমাতে সরকার তিন বছর মেয়াদি একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি প্রণোদনা দিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে উপজেলায় এ বছর ৭ হাজার ১৫৬ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে।”
গত মৌসুমে ৬ হাজার ৩৬৬ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “গত বছরের চেয়ে এবার ৭৯০ হেক্টর বেশি জমিতে আগাম জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। অথচ ২০১৮ সালে মাত্র ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল সরিষা।”
তিনি জানান, ২০২১ মৌসুমে চাষ হয়েছিল ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। ২০২০ মৌসুমে শার্শা উপজেলার ২ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করেছিল চাষিরা। ২০১৯ মৌসুমে এ উপজেলার দেড় হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়।
প্রতিবছর এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ভোজ্য তেলের আমদানি ৮০ ভাগ থেকে ৪০ ভাগে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
অল্প দিনে বেশি ফলনের কারণে চাষিরা এটিকে ‘লাভের ফসল’ হিসেবে দেখছেন।
শার্শা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তরুণ কুমার বালা জানান, চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত উপজেলার ৭ হাজার ১৫৬ হেক্টর জমিতে ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল আগাম জাতের সরিষা চাষ করেছেন চাষিরা।
তবে নাবি জাতের সরিষা চাষের জন্য এখনই জমি তৈরি করছেন কৃষকরা।
সর্বাধিক আবাদকৃত জাতের মধ্যে রয়েছে বারি-১৪, বিনা-৯ জাতের সরিষা, অন্যান্য জাতের মধ্যে বারি-১৭, বারি-১৮, বুলেট, পাঞ্জাবজটা রয়েছে।
উপজেলার রাজনগর গ্রামের প্রভাত বিশ্বাস, লক্ষণপুরের খামারপাড়া গ্রামের রায়হান গফুর, পাঁচভুলোট গ্রামের আনোয়ার হোসেন, কাগজপুকুর গ্রামের কবির হোসেন ও গয়ড়া গ্রামের ফারুক হোসেন কৃষি বিভাগের পরামর্শে ৬ বিঘা করে জমিতে অধিক ফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করেছেন বলে জানান তরুণ বালা।
উপজেলার রাজনগর গ্রামের প্রভাত বিশ্বাস বলেন, এ বছর ৬ বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষা চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার টাকা। সরিষার গাছ, ফুল ফল ভালো হয়েছে। আশা করছি, বাম্পার ফলন হবে।
সাড়াতলা গ্রামের কাদের মিয়া বলেন, গত বছর সরিষার দাম ভালো ছিল, চাহিদাও ছিল তাই এবারও সরিষা চাষ করেছি ফলন ভালো হবে। উপযুক্ত দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরো অনেকেই ঝুঁকে পড়বে।
পাঁচভুলোট গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে পাঁচ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেছি। সরিষা উঠার পর ওই জমিতে ধানের আবাদও ভালো হয় এবং চাষে খরচও কম হয়।
বেনাপোলের কাগজপুকুর গ্রামের কবির হোসেন বলেন, বারি-১৪ সরিষা গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করে। এতে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। এ জাতের সরিষা আবাদের পর ওই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণও কম লাগে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দীপক কুমার সাহা জানান, কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এবার প্রায় ৫ হাজার ৬০০ জন কৃষককে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
প্রণোদনার কর্মসূচির আওতায় ৫ হাজার ৫০০ জন কৃষকের মধ্যে বারি সরিষার ১৪ এর বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।
কর্মসূচির আওতায় ৫০ জন কৃষকের মধ্যে বীজ ও সার এবং তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ৫০ জন কৃষকের মধ্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।
বারি-১৪ সহ অন্যান্য সরিষা বপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়।
এ সরিষা উত্তোলন করে ফের বোরো আবাদ করতে পারেন বলে এটাকে কৃষকরা ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।