মন্ত্রী তার স্ত্রীর এবং ছেলে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের সম্পদের পরিমাণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করেননি।
Published : 08 Dec 2023, 07:48 PM
গত পাঁচ বছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের আয় কমলেও ব্যাংকে জমা রাখা টাকার পরিমাণ বেড়েছে দুই গুণের বেশি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নুরুজ্জামান আহমেদের জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নুরুজ্জামান সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামা অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয় ৩২ লাখ ৬ হাজার ৪০৬ টাকা। যা একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ছিল ৩৪ লাখ ৩৫ হাজার ৮৫৫ টাকা।
সেই হিসাবে গত পাঁচ বছরের তার বার্ষিক আয় কমেছে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে লালমনিরহাট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় হলফনামায় যে হিসাব উল্লেখ করেছেন তাতে নগদ টাকা অর্থের পরিমাণ কমলেও ব্যাংক জমার পরিমাণ বেড়েছে।
হলফনামা অনুযায়ী, তার অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ অর্থের পরিমাণ ৯৫ লাখ ৭৮ হাজার ২৫৪ টাকা আর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ১৪ লাখ ৪ হাজার ৯৯৭ টাকা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৪২ লাখ ৮২ হাজার ২১০ টাকা আর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১ কোটি চার লাখ ৪৭ হাজার ৫৮৩ টাকা ০১ পয়সা।
এতে নগদ অর্থের পরিমাণ কমলেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ২ গুণের বেশি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর নুরুজ্জামান আহমেদ নিজের পেশা উল্লেখ করেছেন ব্যবসা। শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন বি.কম পাস। কোনো ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ নেননি।
মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ একমাত্র ছেলে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ এবং তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ হলফনামায় উল্লেখ করেননি।
হলফনামায় তিনি আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন কৃষি খাতে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকা, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য স্থাপনা থেকে ভাড়া বাবদ ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ টাকা, ব্যবসায় ৬ লাখ টাকা, শেয়ার সঞ্চয়/ব্যাংক আমানত থেকে ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৯৬ টাকা ও মন্ত্রী হিসেবে সম্মানী ভাতা ১৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখিয়েছেন নগদ টাকা ৯৫ লাখ ৭৮ হাজার ২৫৪ টাকা; ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ২ কোটি ১৪ লাখ ৪ হাজার ৯৯৭ টাকা; পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থানী আমানতের বিনিয়োগ ২০ লাখ টাকা; ডিউটি ফ্রি কার ৩৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা, স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ৩২ হাজার টাকা, ইলেকট্রিক সামগ্রী ৬০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ২৬ হাজার ৫০০ টাকা।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রী নুরুজ্জামানের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কৃষি জমির পরিমাণ ২৫ বিঘা, যার মূল্য ৩১ হাজার ৫০০ টাকা; পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া অকৃষি জমি ২০ শতক, যার মূল্য ৭ লাখ টাকা।
মন্ত্রীর ঢাকায় রাজউকের একটি প্লট রয়েছে, যার আর্থিকমূল্য ৩০ লাখ টাকা দেখিয়েছেন তিনি। এছাড়া কালিগঞ্জ উপজেলায় ৩৫ বিঘা জমিতে তার মৎস্য খামার (পৈত্রিক সূত্রে) রয়েছে, যার মূল্য দেখিছেন ৭০ হাজার টাকা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নুরুজ্জামান বাৎসরিক আয়ের উৎস বিবরণ উল্লেখ করেছেন কৃষি খাতে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫শ টাকা, বাড়ি/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া ৯২ হাজার ৪০০ টাকা, ব্যবসা তামাক সঞ্চয়ী হিসাব সুদ ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৩৯৫ টাকা, সম্মানী ভাতা ১১ লাখ ৪ হাজার টাকা, মৎস্য চাষের আয় ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬০ টাকা।
সেখানে নিজের অস্থাবর সম্পদ হিসাবে দেখিয়েছেন নগদ টাকা ১ কোটি ৪২ লাখ ৮২ হাজার ২১০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১ কোটি ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮৩ টাকা, স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ২৫ তোলা, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ৬০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ২৬ হাজার ৫০০ টাকা, অন্যান্য ৬ হাজার টাকা, একটি ডিউটি ফ্রি কার।
স্থাবর সম্পদের বিবরণীতে কৃষি জমি ২৫ বিঘা; অকৃষি জমি, দালান, যার মূল্য ৭ লাখ টাকা, বাড়ি অ্যাপার্টমেন্ট ৩০ লাখ টাকা (ঢাকায় রাজউকের প্লট), মৎস্য খামার ৩৫ বিঘা, অন্যান্য ৬ হাজার টাকা।
মন্ত্রী একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ২৫ বিঘা জমির মূল্য উল্লেখ না করলেও এবার সেই জমির দাম দেখিয়েছেন ৩১ হাজার ৫০০ টাকা।
একইভাবে মৎস্য খামারের মূল্য এ বছর দেখিছেন ৭০ হাজার টাকা। এছাড়াও একাদশ নির্বাচনে মৎস্য খামার থেকে আয় দেখিয়েছিলেন ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬০ টাকা কিন্তু এবার হলনামায় এ খাত থেকে কোনো আয়ের তথ্য দেননি মন্ত্রী।