ম্রো পাড়ায় অগ্নিসংযোগকারীরা প্রশ্রয় পাবে না: মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান

পহেলা জানুয়ারি রাতে রেংয়েন ম্রো পাড়ার তিনটি ঘরে আগুন দিয়ে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত করে দেয় একদল হামলাকারী।

বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2023, 06:59 PM
Updated : 17 Jan 2023, 06:59 PM

ম্রো পাড়ায় যারা অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ। 

মঙ্গলবার বিকালে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়েন ম্রো পাড়ায় অগ্নিসংযোগ ও হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। 

এর আগে ৫ জানুয়ারি সেখানে পরিদর্শনে যান কমিশনের চার সদস্যের একটি তদন্ত দল।

কামাল উদ্দিন বলেন, “ম্রো পাড়ায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে ঘটনায় অন্যায়কারীরা কখনও প্রশ্রয় পাবে না। যারা অন্যায় করেছে তাদের বিষয়ে খবর নিয়ে জানা হবে। প্রকৃতপক্ষে ভূমির মালিক যারা তাদের অধিকার থাকবে।” 

গত ১ জানুয়ারি রাতে রেংয়েন ম্রো পাড়ার তিনটি ঘরে আগুন দিয়ে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত করা হয়। ওই সময় তিনটি ঘর সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেয় হামলাকারীরা। আরও দুটি ঘরে হামলা ও ভাঙচুর করে নগদ অর্থ, ঘরের জিনিসপত্র ও গবাদিপশু লুট করে। 

পাড়াবাসীরা এ ঘটনার জন্য ‘লামা রাবার ইন্ড্রাট্রিজ লিমিটেডের লোকজনকে দায়ী করে আসলেও তা অস্বীকার করেছে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ। 

মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আরও বলেন, এ বিষয়ে আরও তদন্ত হওয়ার দরকার আছে। গত বছরের ২৬ এপ্রিল প্রথম যখন আগুন লাগানো হয় তখন থেকে তদন্ত করা শুরু হয়। 

‘কিছু তথ্য পাওয়ার বাকি ছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেগুলো নিয়ে তথ্য আদায় করার চেষ্টায় ছিলাম। এর মধ্যে দুর্ভাগ্যক্রমে ১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। তার জন্য আমরা নিজেরাও দুঃখিত।”

যেকোনো পরিস্থিতিতে পাড়াবাসীদের ধৈর্য্য ধরার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো রকমে নিজেদের শরীরে উপর আঘাত আসতে পারে। যেকোনো রকমের মারমুখী অবস্থাকে মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের কিছুতে আপনারা যাবেন না। নিজেদের সন্তানসন্ততিদের নিয়ে সেদিন একটা নিরাপদ জায়গায় গিয়েছিলেন। তার মানে আপনারা নিজেদের জীবনকে রক্ষা করেছেন। এটা ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু অন্যায়কারীরা রক্ষা পাবে না। 

এ সময় কমিশনের অন্য তিন সদস্য সেলিম রেজা, কাউসার আহমেদ ও কংজরি চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা জাবেদ, লামা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও গজারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াইনচিং মারমা, সরই ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস উপস্থিত ছিলেন। 

এ সময় সরই ভূমিরক্ষা কমিটির পক্ষে একটি স্মারক দিয়েছেন কমিটির সদস্য সচিব ও রেংইয়েন পাড়ার কারবারি রেংইয়েন ম্রো। 

গত বছর ২৬ এপ্রিল বান্দরবানের লামার উপজেলার সরই এলাকায় ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস করা ৪০০ একর ভূমিতে আগুন দেওয়া হয়। এতে ৩৫০ একর জুমভূমি পুড়ে বিরাণ হয়ে যায়। 

এতে বাঁশ ও গাছ কেটে বিক্রি করে আয়ের নির্ভর করা লাংকম ম্রো পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়া ও রেংয়েন ম্রো পাড়ার মোট ৩৬টি পরিবার কিছুদিন খাদ্য সংকটে পড়ে। এরপর ৪০০ একর ভূমি রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে তিন পাড়াবাসী। অন্যদিকে এই ৪০০ একর ভূমি নিজেদের ইজারার জায়গা বলে দাবি করে আসছে রাবার কোম্পানি ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটিটেড’।