শনিবার রাতে ঢাকা থেকে দুই বন্ধুকে নিয়ে ঢাকার সদর ঘাট থেকে লঞ্চে করে রওয়ানা দেন তানজিল। পথে বন্ধুদের সঙ্গে তারও প্রাণ যায়।
Published : 23 Oct 2022, 06:06 PM
বিয়ের প্রস্তুতি প্রায় শেষ; নতুন জীবন শুরুর স্বপ্ন বুকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তানজিল মোল্লা। কথা ছিলো মাত্র একদিন পরই বসবেন বিয়ের পিঁড়িতে, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে গায়ে শেরওয়ানির জায়গায় জড়াতে হয়েছে কাফনের কাপড়।
ঢাকা থেকে ডামুড্যাগামী স্বর্ণদ্বীপ প্লাস লঞ্চ শরীয়তপুরে সেতুর সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার পর ছাদে থাকা পানির ট্যাংক নিচে পড়ে যে তিন যাত্রীর প্রাণ গেছে, তাদের মধ্যে তানজিল একজন। রোববার ভোরের পর গোসাইরহাটের কোদাল পুর ইউনিয়নের রশিদ মোল্লা কান্দি গ্রামে তার বাড়ির উল্লাস পরিণত হয়েছে শোকের মাতমে।
নিহত তানজিল গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের রশিদ মোল্লা পাড়া এলাকার শাহ আলী মোল্লার ছেলে। সম্প্রতি একই উপজেলার কোদালপুরের ভোগকাঠি গ্রামের আলমগীর ব্যাপারীর মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়। সোমবার তার বিয়ের দিন ধার্য ছিলো। কিন্তু তার একদিন আগেই গায়ে হলুদের দিন প্রাণ হারাতে হলো তাকে।
এদিকে এ ঘটনায় দুজনকে আটকের খবর জানিয়েছেন গোসাইরহাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ওবায়েদুল হক। এরা হলেন- স্বর্ণদ্বীপ প্লাস লঞ্চের মাস্টার মো. নুরুজ্জামান ও লস্কর মো. ইমরান হোসেন।
বিয়ের আনুষ্ঠানিক প্রস্ততি শেষ। তাই শনিবার রাতেই ঢাকা থেকে দুই বন্ধুকে নিয়ে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে রওনা দেন তানজিল। পথে লঞ্চে বন্ধুদের সঙ্গে তারও প্রাণ যায়।
পুলিশ জানায়, স্বর্ণদ্বীপ প্লাস ঢাকার সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসে শনিবার রাত ১০টার দিকে। গোসাইরহাটের কুচাইপট্টি এলাকার পার হওয়ার সময় সাইক্ষ্যা ব্রিজের সঙ্গে লঞ্চটি ধাক্কা খায়। এ সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খায় লঞ্চটি। তাতে লঞ্চের তৃতীয় তলায় থাকা পানির ট্যাংক ফেটে নিচে যাত্রীদের উপরে পড়লে ঘটনাস্থলেই দুই যাত্রীর মৃত্যু হয়। আহতদের উদ্ধার করে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়ার পর সেখানে আরও একজন মারা যান।
ওসি ওবায়েদুল বলেন, “আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি লঞ্চে থাকা পানির ট্যাংক ফেটে নিচে পড়ে রয়েছে। আমরা টাংকের নিচে চাপা পড়া পাঁচজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এর মধ্যে তিনজন মারা গেছে। একজনকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে।“
নিহত বরের চাচা আলতাফ মোল্লা বলেন, “গত তিন বছর ধরে গাজীপুরের দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড (ডিবিএল) কোম্পানিতে জুনিয়র অপারেটর পদে কর্মরত ছিলো তানজিল। তানজিল তার বন্ধুদের নিয়ে বিয়ের বাজার করে গাজীপুর থেকে রওয়ানা দেয়। ঢাকার সদরঘাট এসে স্বর্ণদ্বীপ প্লাস নামের লঞ্চে রাত ১০টায় রওনা দেয় গোসাইরহাট উদ্দেশ্যে।”
এদিকে তানজিনের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর শোকে বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন তার মা ফাতেমা। তানজিনের বাবা শাহ আলী মোল্লা বলেন, “আজ আমার ছেলের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান ছিল। সোমবার বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। সে অনুযায়ী বাড়িতে আনন্দ উল্লাস চলছিলো। সেখানে আজ আমার ছেলে লাশ হয়ে ফিরে এলো। এ শোক সইবার সাধ্য আমাদেরও নেই।”
স্বর্ণদ্বীপ প্লাসের যাত্রী সোবাহান বলেন, “সাইক্ষ্যা ব্রিজের যেদিক দিয়ে আসার কথা ছিল, সেখান দিয়ে না গিয়ে ব্রিজের কাছ দিয়ে যাওয়া কারণে এ দুঘটনা ঘটে।”
আবুল হোসেন নামের আরেক যাত্রী বলেন, “ভোরে আমি নামাজ পড়তে উঠি। হঠাৎ করে বিকট শব্দ শুনি ব্রিজের সঙ্গে কিছু একটা ধাক্কা লাগার শব্দ পাই। দৌড়ে গিয়ে দেখি, ব্রিজের সঙ্গে লঞ্চের ধাক্কা লেগেছে। পরে লঞ্চ পাড়ে ভিড়লে উপরে ওঠে দেখি, পানির ট্যাংক নিচে পড়ে গেছে।”
এ ঘটনায় নিহত বাকিরা হলেন- জামালপুর জেলার রগুনাথপুর দিঘলি সোনাটিয়া গ্রামের বোরহান আলীর ছেলে সাগর আলী (২৩) ও টাঙ্গাইল জেলার দাইনাবঘির গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে শাকিল আহমেদ (২৫)।
স্বর্ণদ্বীপ প্লাস লঞ্চটিতে প্রায় ২৫০ জন যাত্রী ছিল বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। দুর্ঘটনার পর লঞ্চটি গোসাইরহাটে ঘাটে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।