ভাষা সংগ্রামী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সিলেটে স্মরণসভা হয়েছে।
রোববার বিকালে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সোলেমান হলে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আরশ আলী।
অনুষ্ঠানের মুহিতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা পর্বে 'বহুমাত্রিক আবুল মাল আবদুল মুহিত' শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট লেখক, অনুবাদক ও টেগোর সেন্টারের প্রধান নির্বাহী মিহিরকান্তি চৌধুরী। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন শিক্ষাবিদ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ।
বক্তারা বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত মেধা মনন এবং সৃজন কর্মের জন্য ছিলেন পৃথিবীর আলোকিত মানুষ। তিনি সাদাকে সাদা, কালো কালো বলতেন। তিনি ছিলেন সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে একজন বিশ্বনাগরিক।
সংগঠনের সদস্য সচিব আহমেদ নূরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন এক কর্মঠ দেশপ্রেমিক। তার মৃত্যুর আগে গুণিশ্রেষ্ঠ হিসেবে গণসংবর্ধনা দিতে পেরে সিলেটবাসী ধন্য। কিন্তু আমরা রাজনীতিবিদরা কি তাকে যথাযথ সম্মান দিতে পেরেছি? পারিনি। আমরা তার আদর্শ লালন করে তাকে সম্মান জানাতে পারিনি।”
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, “আবুল মাল আবদুল মুহিত সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতেন। তার প্রতি আস্থা ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার। তিনি প্রচলিত রাজনীতিবিদ না হয়েও কীভাবে মাঠপর্যায়ে রাজনীতি করতে হয়, তা জানতেন। নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতেন। তিনি আঞ্চলিকতাকে পরিহার করেও সিলেটের উন্নয়ন করেছেন। এই মহান ব্যক্তির জীবন ও কর্ম নিয়ে এই ছোট্ট পরিসরে আলোচনা করা সম্ভবপর নয়।”
তিনি বলেন, “তার মেধা মনন এবং সৃজন কর্মের জন্য তিনি ছিলেন পৃথিবীর আলোকিত মানুষ।”
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন বলেন, “যখনই আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে যেতাম, সময় দিতেন। আমি তাকে চিনি গবেষক হিসেবে। তার হাতে সবসময়েই বই থাকতো। এবং তার অনুপ্রেরণায় আমিও লেখালেখি করি।”
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, “তিনি ছিলেন ক্ষণজন্মা। মনেপ্রাণে বাঙালি ছিলেন। তিনি একটি নির্বাচনে হেরে গেলেও সিলেট ত্যাগ করেননি। মানুষের পাশে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন। আমি বলব, মৃত্যুর পরেও তিনি আমাদের মাঝে আছেন; থাকবেন।”
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, “তার পরিকল্পনার ধারাবাহিক ফল পাচ্ছি আমরা। সৎ এবং কর্মঠ ব্যক্তি হিসেবে তার অবদান ছিল অনন্য। তার বিকল্প কেউ হবে না। তার কর্মকাণ্ড নিয়ে গ্রন্থ বের হোক।”
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, “ভাষাসৈনিক এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি বিরল সৌভাগ্যবান।”
সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ বলেন, “প্রতিবছর যদি তাকে নিয়ে এরকম ছোটো ছোটো সংকলন বের করা হয়, তাহলে তার বর্ণাঢ্যজীবন সম্পর্কে আমরা জানতে পারব।”
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “আবুল মাল আবদুল মুহিত শেখ হাসিনা সরকারের অগ্রণী পুরুষ ছিলেন।”
“সরল মানুষ ছিলেন। যা বিশ্বাস করতেন, তাই স্পষ্টভাবে বলতেন। তিনি সিলেটি হয়েও আন্তর্জাতিক ছিলেন। পদ্মাসেতু তার সাহসের ফসল; প্রজ্ঞার ফসল। সিলেটের শুধু নয়, দেশের ব্যাপক উন্নয়নে তার অবদান চির স্মরণীয়।”
মূল প্রবন্ধে মিহিরকান্তি চৌধুরী বলেন, “আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের হাতে গোনা ব্যক্তিদের একজন যিনি সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতেন অনায়াসে। তিনি যে নির্ভীক ছিলেন তা অনেকের জন্য ভয়ের কারণ ছিল। তার মেধা, মনন ও ব্যক্তিত্বের সঠিক বিকাশ সঠিক সময়ে হয়েছে বলেই তার এই দুর্দান্ত প্রকাশ সম্ভবপর হয়েছিল। বর্তমান বাংলাদেশে বিকাশের আগেই প্রকাশ স্থান করে নিয়েছে।”
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় শিক্ষাবিদ ডক্টর আবুল ফতেহ ফাত্তাহ বলেন, “তার রাগের মধ্যে সংস্কৃতি ছিল, তার কলহাস্যে ছিল সংস্কৃতি। তার সারল্য এবং মেধাপ্রজ্ঞা ছিল প্রবাদপ্রতিম। তার রচনা পঠন-পাঠনের মাধ্যমে তাকে স্মরণ করব।”
স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম, সহ-সভাপতি ও রাজনীতিবিদ বিজিত চৌধুরী, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি আবদুল জব্বার জলিল, মো. রাজউদ্দিন, কবি একে শেরাম, কবি নাসিমা চৌধুরী, সম্মিলিত নাট্যপরিষদের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত ।
সভাপতির বক্তব্যে আরশ আলী বলেন, “ব্যক্তি আবুল মাল আবদুল মুহিত একটি প্রতিষ্ঠানে নিজেকে রূপান্তর করেন। পারিবারিক শিক্ষা পরিবেশ তার সুখ্যাতির পেছনে কাজ করেছে। তিনি দেশপ্রেমিক এবং আজীবন মানুষের কল্যাণে নিবেদিত ছিলেন।”