নরসিংদীর মেঘনা থেকে সজারু উদ্ধার, বনে অবমুক্ত

ভোরে নদীতে মাছ ধরে ফেরার সময় প্রাণীটিকে পানিতে নড়ে উঠতে দেখেন এক জেলে।

নরসিংদী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2023, 01:30 PM
Updated : 7 June 2023, 01:30 PM

নরসিংদীর রায়পুরায় মেঘনা নদী থেকে একটি সজারু উদ্ধারের পর স্থানীয় সামাজিক বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।

বুধবার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ঢাকার বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানার নির্দেশে রায়পুরার পান্থশালা সংলগ্ন সামাজিক বনে সজারুটি অবমুক্ত করা হয়।

এর আগে বুধবার ভোরে উপজেলার মাঝেরচর গ্রামের রাশেদ মিয়া (৩০) নামের এক জেলে মাছ ধরতে গিয়ে পান্থশালা সীমানা ঘেঁষা মেঘনা নদী থেকে সজারুটি উদ্ধার করেন।

রাশেদ মিয়া বলেন, তিনি ভোরে প্রতিদিনের মতো মেঘনায় মাছ ধরতে যান। ফেরার সময় পানিতে কিছু একটা নড়তে দেখেন। তিনি ও সেখানে থাকা আরও কয়েকজন প্রথমে এটিকে বড় ইঁদুর বলে ধারণা করেন। এ সময় কেউ কেউ প্রাণীটিকে মেরে ফেলতে চান। কিন্তু রাশেদ মিয়া চিনতে পেরে অন্যদের বাধা দেন। পরে তিনি সেটিকে ধরে সুতা দিয়ে বেঁধে রাখেন।

ধরার সময় সজারুর গায়ের তিন-চারটি কাঁটা হাতে বিঁধে জানিয়ে ওই জেলে বলেন, সজারুটি ওজন ৫ কেজির মতো হবে।

পরে স্থানীয় এক সাংবাদিক সজারুটির ছবি পাঠান বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ঢাকার বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানার কাছে।

তিনি এই প্রজাতিটিকে দেশীয় সজারু (Indian Crested Porcupine) বলে চিহ্নিত করেন।

তার ধারণা, খাবারের খোঁজে প্রাণীটি লোকালয়ে আসে। তবে এটা পানিতে যাওয়ার কথা না।

নিগার সুলতানা জানান, সজারু একটি নিরীহ তৃণভোজী প্রাণী। এটি কারও কোনো ক্ষতি করে না। প্রকৃতিতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তিনি বলেন, “খবর পেয়ে আমরা সজারুটি বনে অবমুক্ত করতে ওই জেলে ও সচেতন নাগরিক হিসেবে স্থানীয় মসজিদের ইমামের সহযোগিতা চেয়েছি।

“আমরা চাইলে এটিকে ঢাকার চিড়িয়াখানা কিংবা দূরে কোথাও বনে অবমুক্ত করতে পারতাম। এতে সজারুটির প্রতি অমানবিক আচরণ হবে। যে এলাকা থেকে ওই জেলে সজারুটি ধরেছেন, ওখানে তার পরিবার আছে নিশ্চয়ই। আমরা ঢাকা নিয়ে আসলে সজারুটির পরিবার থেকে বঞ্চিত হবে। তাই আমরা চেয়েছি, যেখান থেকে সজারুটি ধরা হয়েছে, তার আশপাশে শুকনো নিরিবিলি জায়গায় ছেড়ে দিলে সে তার পরিবার খুঁজে নেবে। ওই জেলে ও ইমাম সজারুটি ছেড়ে দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছেন।”

সজারুটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বলে জানান বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানা।

তিনি আরও জানান, সজারু বৃহৎ ইঁদুরজাতীয় নিশাচর প্রাণী। এরা মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বাসস্থান বানায়। তৃণভোজী জীব হিসেবে প্রাণীটি ঘাস, লতা-পাতা, ফলমূল, শস্যদানা ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারণ করে। এরা সাধারণত আড়াই বছরে পূর্ণ বয়স্ক হয় এবং বছরে এক থেকে চারটি বাচ্চা দেয়। পূর্ণ বয়স্ক একটি সজারু ১০ থেকে ১২ কেজি ওজন হয় এবং ১৮ থেকে ২০ বছর বাঁচে।

“যে কোনো প্রাণী রেগে গেলে সামনের দিক দিয়ে আক্রমণ করে। সজারু ব্যতিক্রম, যে কিনা পেছন দিক দিয়ে আক্রমণ করে। সাধারণত তীক্ষ্ণ ও বিষাক্ত কাটা ফুটিয়ে দিয়ে শিকারিকে নিবৃত করে সজারু।”

তিনি বলেন, এক সময় দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই সজারুর দেখা মিলত। বর্তমানে সুন্দরবনসহ বেশকিছু সংরক্ষিত বনে সজারু টিকে আছে বলে তথ্য পাওয়া গেলেও গত কয়েকবছরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সজারুর দেখা মিলছে; যা প্রাণীটির টিকে থাকার ব্যাপারে দারুণ আশাব্যাঞ্জক খবর।

দেশে সজারু ‘খুবই বিপন্ন’ জানিয়ে নিগার সুলতানা বলেন, ব্যাপক নিধন ও বাসস্থান ধ্বংসই এদের বিপন্ন হওয়ার প্রধান কারণ।

বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা দণ্ডনীয় অপরাধ বলেও জানান এ বন্যপ্রাণী পরিদর্শক।