চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় তিনজন করে, নাটোরে দুইজন, ঠাকুরগাঁওয়ে একজন ও দিনাজপুরে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
Published : 07 Jun 2024, 10:34 PM
দেশের চার জেলায় বজ্রপাতে চার নারী, দুই শিশুসহ দশজন নিহত হয়েছেন।
এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় তিনজন করে, নাটোরে দুইজন, ঠাকুরগাঁওয়ে একজন এবং দিনাজপুরে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে নাটোরে এক নারী বজ্রপাতের তীব্র শব্দে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা চিকিৎসকের।
শুক্রবার বেলা ২টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টার মধ্যে জেলাগুলোয় ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে এসব প্রাণহানি হয়।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চাঁপাইনবাবগঞ্জ :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট ও শিবগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হলে এসব ঘটনা ঘটে।
ভোলাহাট থানার ওসি সুমন কুমার জানান, ঝড়-বৃষ্টির সময় বাগানে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে আমেনা খাতুন নামের এক শিশু।
১০ বছরের আমেনা উপজেলার জামবাড়িয়া ইউপির বড়গাছি হঠাৎপাড়া গ্রামের এসলামের মেয়ে।
শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউপির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, দক্ষিণ উজিরপুর গ্রামে বাড়িতে গোসল করার সময় বজ্রপাতে নিহত হয়েছে কবিতা খাতুন নামে এক শিশু।
কবিতা (১১) ওই গ্রামের এরশাদ আলী ওরফে রাকিবুলের মেয়ে।
এছাড়া শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন, শিবগঞ্জ পৌর এলাকায় বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন হরিজন সম্প্রদায়ের এক নারী। ববি নামের ৩৫ বছর বয়সী ওই নারী আলী ডাঙ্গা মহল্লার সুভাষের স্ত্রী।
নওগাঁ :
নওগাঁর মান্দা ও পত্নীতলা উপজেলায় দুই কৃষক ও একজন নারীসহ তিনজন মারা গেছেন।
শুক্রবার বিকালে বজ্রপাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়াও বদলগাছীতে বজ্রপাতে আরও দুইজন আহত হয়েছে।
নিহতরা হলেন, মান্দা উপজেলার ভোলাম গ্রামের ফইমদ্দিন মণ্ডলের ছেলে শামসুল হক (৩৫) ও পত্নীতলা উপজেলার পাটিচড়া ইউনিয়নের নাগরগোলা গ্রামের বিশা মণ্ডলের ছেলে খাদেমুল ইসলাম (৫০) ও গাহন গ্রামের আব্দুল হামিদের স্ত্রী মনিকা (৩৫)।
আহতরা হলেন, বদলগাছীর গাবনা গ্রামের অবির উদ্দিন ফকিরের ছেলে আবুল হোসেন ফকির (৫৫) ও আমিন আলী ফকিরের ছেলে আব্দুল খালেক ফকির (৩৫)।
নিহত শামসুল হকের বাবা ফইমুদ্দিন জানান, তার ছেলে বিকালে বাড়ির পাশের মাঠে ধানের কাজ করার সময় বজ্রপাতে আহত হয়। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা দেওয়া হয়। কিন্তু পথেই তার মৃত্যু হয়।
পত্নীতলা থানার ওসি মোজাফফর হোসেন ঘটনার, শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে পাটিচড়া ইউনিয়নের নাগরগোলা গ্রামে কৃষক খাদেমুল ইসলাম মাঠ থেকে ধান বহন করে বাড়ির উঠানে এসে বজ্রপাতের কবলে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া গাহন গ্রামের বাড়ির সামনে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা গেছেন গৃহবধূ মনিকা।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, বদলগাছীতে শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে দুই ব্যক্তি কাজের উদ্দেশ্যে মাঠে যাচ্ছিল। হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে তারা একটি গাছের নিচে আশ্রয় নেন।
তখন হঠাৎ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলে তারা গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখানে তারা চিকিৎসাধীন আছেন।
তিনটি অপমৃত্যু ঘটনায় মান্দা ও পত্নীতলা থানায় মামলা করে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
নাটোর:
নাটোরের নলডাঙ্গা ও গুরুদাসপুর উপজেলায় বজ্রপাতের কারণে এক যুবক ও এক নারী মারা গেছেন।
এর মধ্যে শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে নলডাঙ্গায় বারনই নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে মো কামরুল হোসেন (৩৫) মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ব্রহ্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আশরাফুজ্জামান মিঠু।
নিহত কামরুল হোসেন নলডাঙ্গার কোমরপুর এলাকার মো. লুৎফর রহমানের ছেলে।
মিঠু বলেন, দুপুরে কামরুল কোমরপুর গোরস্তান সংলগ্ন নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরার সময় বিকট শব্দে বজ্রপাত ঘটলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিবারের লোকজন কামরুলের মরদেহ উদ্ধার করেন।
এ ব্যাপারে নলডাঙ্গা থানার ওসি মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় কোনো মামলা হবে না। গ্রামের মানুষ বজ্রপাতের নিহতের ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান নিহত ব্যক্তির মৃত্যুর প্রত্যায়ন দিবেন।
এদিকে, গুরুদাসপুর উপজেলায় হাঁস আনতে গিয়ে বজ্রপাতে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে গৃহবধূ আবেরা বেগমের (৪০) মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন গুরুদাসপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজলুর রহমান ফজল।
দুই সন্তানের জননী আবেরা বেগম গুরুদাসপুরের আনন্দ নগরের মো. সাদ্দাদ হোসেনের স্ত্রী।
নিহতের স্বজন কাউন্সিলর ফজল বলেন, দুপুরে আকাশে মেঘ দেখে আবেরা বেগম বাড়ির পাশে ডোবা থেকে হাঁস ফিরিয়ে আনতে যান।
“এসময় বৃষ্টি শুরু হলে তিনি একটি আম গাছের নিচে আশ্রয় নেন। তখন হঠাৎ বিকট শব্দে বজ্রপাত হলে তিনি সেখানেই লুটিয়ে পরেন।”
পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কমপ্লেক্সের চিকিৎসক চৈতি মুন্সি বলেন, আবেরা বেগমকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে তার মৃত্যু হয়। তার শরীরে বজ্রপাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, বজ্রপাতের শব্দে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন।
ঘটনার পরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে গুরুদাসপুর থানার ওসি, মো. উজ্জল হোসেন বলেন, “উনার হার্টের সমস্যা ছিল। বজ্রপাতের তীব্র শব্দে স্ট্রোক করে তিনি মারা যেতে পারেন।”
ঠাকুরগাঁও:
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
পীরগঞ্জ থানার ওসি খায়রুল আনাম বলেন, শুক্রবার দুপুরে উপজেলার জাবরহাট ইউনিয়নের রনশিয়া দোসিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
লিপি আক্তার (৩৫) রনশিয়া গ্রামের ফিরোজ জামানের স্ত্রী।
পরিবারের বরাতে ওসি খায়রুল বলেন, দুপুরে গৃহবধূ লিপি আক্তার বাড়ির ভুট্টা ক্ষেতে শুকনো গাছ তুলতে গিয়েছিলেন। এ সময় রনশিয়া গ্রামে হঠাৎ করে ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতের আঘাতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
পরে পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।
ওসি খায়রুল আনাম বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে ।
দিনাজপুর:
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে এক কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলার লালঘাট বাজার সড়কে এই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নবাব্গঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুজ্জামান।
জুয়েল রানা (১৯) নবাবগঞ্জ উজেলার কুশদহ ইউনিয়নের দামাইল সরকারপাড়া গ্রামের গোলজার হোসেনের ছেলে ও নবাবগঞ্জ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুজ্জামান বলেন, “লালঘাট বাজারের পূর্ব রাস্তায় ধান শুকাচ্ছিলেন জুয়েল রানা। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে জুয়েল গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
“স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।”