চুয়াডাঙ্গায় ৩৮, রাজশাহীতে ৭৬, সিরাজগঞ্জে ১৪৭, সিলেটে আট, নওগাঁয় ১১০ এবং রাঙামাটিতে ৯, নাটোরে ৩৭, ফেনী ও গাইবান্ধায় ১০ জন করে, নীলফামারীতে ছয়জন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী আটক করা হয়।
Published : 29 Oct 2023, 06:06 PM
সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের আগের রাত থেকে প্রায় ২৪ ঘণ্টায় ১০ জেলায় ৪৫১ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার বিকাল পর্যন্ত তাদেরকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশে বিএনপি সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের প্রাণঘাতী সংঘাতের পর পণ্ড হয়ে গেছে দলটির কর্মসূচি। এরপর রোববার সারাদেশে হরতালের ঘোষণা দেয় বিএনপি।
ওই দিনই নির্দলীয় সরকারের দাবিতে জামায়াতেও দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়।
রোববার হরতালকে কেন্দ্র করে সারাদেশে রাস্তায় অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপি-জামায়াতের ৩৮ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার রাতে ও রোববার সকালে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান।
আটকদের মধ্যে রয়েছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রোকন (৫০), দর্শনা থানার নেহালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফরজ আলী (৪৮), জীবননগর পৌর কৃষক দলের সভাপতি ইউনুস আলী (৫৫)।
পুলিশ সুপার বলেন, “আটকরা আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্ন, নাশকতার পরিকল্পনা, ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জানমালের ক্ষতি সাধনকারী হিসেবে চিহ্নিত।”
অভিযান চলাকালে সাতটি বোমা সাদৃশ্য বস্তু, নয়টি বাঁশের লাঠি ও চারটি লোহার রড জব্দ করা হয় বলে জানান তিনি।
রাজশাহী: রাজশাহীতে হরতালের আগে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৭৬ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, শনিবার রাতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৭০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুর রহমান বলেন, রাতে চারঘাট উপজেলায় নাশকতার পরিকল্পনা করার সময় বিএনপির ছয়জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয় হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সিরাজগঞ্জ: হরতালের আগে সিরাজগঞ্জের ১১টি থানার বিএনপি-জামায়াতের ১৪৭ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার বিকেল থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সামিউল আলম জানান।
তিনি বলেন, সদর উপজেলায় ৩৬, রায়গঞ্জ উপজেলায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন দুলালসহ ১৮, বেলকুচি উপজেলায় ২৮, উল্লাপাড়া উপজেলায় ১৩, শাহজাদপুর উপজেলায় ৯, তাড়াশ উপজেলায় ১১, এনায়েতপুর থানায় ১০, সলঙ্গা থানায় সাত, কাজিপুর থানায় সাত, কামারখন্দ থানায় ছয়, চৌহালী থানায় দুজন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় পুলিশের কাজে বাধা প্রদান ও নাশকতার অভিযোগের মামলা রয়েছে।
সিলেট: সিলেটে হারতালে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় আটজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
রোববার নগরীর জিন্দাবাজার এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।
আটকদের মধ্যে তিনজন হলেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল আহমদ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবদল নেতা মোহাম্মদ আব্বাস।
বাকিদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ বলেন, “সিলেটের জনগণের সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা মাঠে রয়েছি। হরতালকে কেন্দ্র করে কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে আমরা কঠোরভাবে তা দমন করব।”
নওগাঁ: নওগাঁর ১১টি উপজেলায় বিএনপি-জামায়াতের ১১০ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার বিকাল থেকে রোববার বিকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি ফয়সাল বিন আহসান জানান।
তিনি বলেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে তাদের আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
রাঙামাটি: ঢাকায় সমাবেশ শেষ করে ফেরার পথে রাঙামাটিতে ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের ৯ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
রোববার সকালে শহরের প্রবেশ মুখ মানিকছড়ি চেকপোস্টে তাদের আটক করা হয় বলে রাঙামাটির কোতোয়ালি থানার ওসি আরিফুল আমিন জানান।
তিনি বলেন, ছাত্রদল-যুবদল ও ছাত্র শিবিরের নয় নেতার্মীকে আটক করা হয়। তাদের বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া আরও ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনকে আসামি রেখে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নাটোর: নাশকতার চেষ্টাসহ এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অভিযোগে নাটোরে বিএনপি-জামায়াতের ৩৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম।
রোববার বিভিন্ন মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর মধ্যে লালপুরে ১২, সিংড়ায় ৫, গুরুদাসপুরে ৩, বড়াইগ্রামে ৬, বাগাতিপাড়ায় ৪, সদরে ৩ ও নলডাঙ্গা চারজনকে আটক করা হয়েছে।
গাইবান্ধা : হরতাল চলাকালে গাইবান্ধায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুন-নবী টিটুলসহ ১০ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
রোববার তাদের আটক করা হয় বলে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মো. মাসুদ রানা জানান।
তিনি বলেন, “স্বাভাবিক চলাফেরা করা জনগণের মৌলিক অধিকার। জনগণের চলাচলে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সাদুল্লাপুর থানার ওসি মাহাবুব আলম বলেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছামছুল হাসানসহ পাঁচ বিএনপি-জামায়াতে নেতাকর্মী আটক করা হয়েছে।
ফেনী: ফেনীতে অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ১০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
শবিবার বিকাল থেকে রোববার বিকাল পর্যন্ত তাদের আটক করা হয় বলে পুলিশ সুপার জাকির হাসান জানান।
ফেনী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রোববার সকালে ফেনী-সোনাইমুড়ী সড়কের বিরলী এলকায় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে পিকেটিং করতে গিয়ে শাকিব নামে একজনকে পুলিশকে আটক করে।
ছাগলনাইয়া থানার ওসি সুদ্বীপ রায় জানান, চাঁদগাজী বাজারে গাড়ি ভাঙচুর করতে চাইলে আরিফ (৩৪) ও জাকির হোসেনকে (২৫) আটক করা হয়। এর আগে তারা একটি ট্রাকের গ্লাস ভাঙচুর করে।
নীলফামারী: নীলফামারীতে বিএনপির পাঁচ নেতাসহ ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।
রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জলঢাকা, সৈয়দপুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. গোলাম সবুর জানান।
তিনি বলেন, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা করার সময় তাদেরকে আটক করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ঠ আইনে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।