কাজ শেষ না করেই বাস সার্ভিস চালু করায় বেশ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে সবাইকে সচেতন হতে বলছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এডিসি।
Published : 25 Dec 2024, 11:12 PM
গাজীপুরের শিববাড়ি থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি লেনে অন্য গাড়ি ঢোকায় সেবা বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বিআরটিসির এসি বাসের যাত্রীরা।
যাত্রীরা বলছেন, বিআরটি প্রকল্পের লেনে প্রতিনিয়ত যাত্রীবাহী অন্য বাস ও মিনি ট্রাকের ভিড়ে যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে। অধিক মূল্যে টিকেট কিনে ভ্রমণ করা বিআরটিসি বাসের যাত্রীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
বুধবার সকালে গাজীপুর শহরের শিববাড়ী এলাকা বিআরটি বাস টার্মিনালের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা টিকেট কেটে বাসে বসে অপেক্ষা করছেন। এ সময় কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় নতুন এ বাস সার্ভিস নিয়ে।
বাসযাত্রী সাব্বির হোসেন বলেন, যাত্রাপথে যানজট এড়াতে এবং সময় সাশ্রয়ের জন্য তিনি এ সার্ভিসের বাসে চলাচল করছেন।
তিনি বলেন, “টঙ্গীর উত্তর থেকে গাজীপুর-চৌরাস্তার কয়েকটি স্থানে বিআরটি বাসের লেনে ফাঁকা রয়েছে। এ স্থান দিয়ে মাঝে-মধ্যেই বাস-ট্রাকসহ ভারি যানবাহন বিআরটির লেনে ঢুকে পড়ে। এতে যানজট সৃষ্টি হয় এবং ওই লেনে বিআরটির বাস আটকা পড়ে। কিছু কিছু এলাকার ওই ফাঁকা স্থান ব্যবহার করে অন্য যানবহন ইউটার্ন করতে গিয়ে বিআরটি বাসের পথ আটকে দেয়। এতে করে এ সার্ভিসের বাস স্বাভাবিক গতি হারায়।”
গত ১৫ ডিসেম্বর বিআরটি প্রকল্পের লেন দিয়ে বিআরটিসির ১৩টি এসি বাস শিববাড়ি থেকে গুলিস্তান চলাচল শুরু করে।
এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. এহছানুল হক গাজীপুরের শিববাড়ি বিআরটি স্টেশনে এক সভায় বলেছিলেন, “সড়কটি চালু হলেও বেশ কিছু সমস্যা থেকেই যাবে। ক্রমান্বয়ে সেসব সমস্যার সমাধান হবে না। মানুষের পারাপারের জন্য পর্যাপ্ত ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। আশা করছি, আগামী বছরের জুনে এই প্রকল্প পুরোপুরি ফাংশনাল করা সম্ভব হবে।”
এই লেনে সেইসব সমস্যার দেখাই যেন মিলছে প্রতিদিন।
বিআরটি পরিবহনের বাসচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, “টঙ্গী কলেজ গেইট থেকে বড়বাড়ি পর্যন্ত বিআরটি লেনটি একেবারে খোলা। বিআরটি লাইনটিতে গাড়ির চাপ কম আছে মনে করে সেই খোলা স্থান দিয়ে অন্য গাড়ি ঢুকে পড়ে। এতে যানজটের সৃষ্টি হয় এবং আমাদের বাসগুলো স্বাভাবিকভাবে আটকা পড়ে যায়।”
এতে চালকের পাশাপাশি ও যাত্রীরা পড়েন ভোগান্তিতে।
এসব কারণে মঙ্গলবার গাজীপুর মহানগরের বোর্ড বাজার থেকে চান্দনা-চৌরাস্তা পৌঁছতে তার দেড় ঘণ্টা লেগে যায় বলে তিনি জানান।
তার দাবি, “অনেক সময় এ রাস্তা অতিক্রম করতে ৪-৫ ঘণ্টাও লেগে যায়।
“অনেক সময় পুলিশের সামনেই বিআরটির উল্টো পথে অন্য গাড়ি ঢুকে যানজটের সৃষ্টি করছে। এ সময় পুলিশ যেন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। পুলিশ যদি একটু ভূমিকা রাখত তাহলে বিআরটি সার্ভিসের এ সমস্যা অনেকাংশেই লাঘব হতো।”
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার বাস কাউন্টারের দায়িত্বরত বিআরটি সার্ভিসের কাউন্টারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, “এখানে বিআরটি লেন ক্লিয়ার থাকে না। অন্য বাস এসে তাদের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলেন। তাদের বললেও কথা শুনেন না, পুলিশের তৎপরতাও ঢিলেঢালা।”
কাউন্টারম্যান হাফিজুর আরো বলেন, তাদের সার্ভিসে শিববাড়ি থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ১৩টি বিআরটি এসি বাস চলছে। নানা কারণে বাসে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী না পাওয়ায় তারা লাভের মুখ দেখেনি।
গত ২৪ ডিসেম্বরের এক পরিসংখ্যান জেনে তিনি বলেন, তাদের আয় হয়েছে ৬৬ হাজার ৬৬০ টাকা আর শুধু জ্বালানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৬২ হাজার ৫৬৩ টাকা। চালক, কর্মচারী কাউন্টার ম্যানের খরচতো বাকিই আছে।
গাজীপুরের শিববাড়ীতে কর্তব্যরত কাউন্টার ম্যান মো. ইব্রাহিম শিকদার বলেন, তাদের বাসগুলোর আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫১টি। এখন সকাল পৌনে ৭টাক থেকে ১০টা পর্যন্ত ৩০ মিনিট পরপর এবং সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ৪৫ মিনিট পরপর গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। শিববাড়ি থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত চারটি এবং গুলিস্তান পর্যন্ত পাঁচটি কাউন্টারে যাত্রী উঠা-নামা করেন।
প্রতি কাউন্টারে ১-২ মিনিট করে তাদের যাত্রা বিরতি।
তিনি জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শিববাড়ি কাউন্টার থেকে ৩৭৯টি টিকেট বিক্রয় হয়েছে। এ টিকেট বিক্রি করে পাওয়া গেছে ৩৪ হাজার ৯৬৫ টাকা।
বিআরটি সার্ভিসের আরেক বাসচালক ফজলে রাব্বী বলেন, তাদের জন্য নির্ধারিত লেনে অন্য গাড়ি ঢুকে পড়ার কারণে যে সময়ে যাত্রীদের নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা সেই সময়ে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। কেউ নির্দেশনা মানছেন না।
পুলিশ সক্রিয় হলে এ সমস্যা অনেকাংশেই কেটে যাবে বলে তার মত।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এডিসি অশোক কুমার পাল বলেন, অবকাঠামোগত কাজ শেষ না করেই বিআরটি বাস সার্ভিস চালু করায় বেশ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
এ ছাড়া বিআরটি লেনে শুধু কিছু নির্দিষ্ট বাস চলতে গিয়ে অন্য লেনগুলোতে হাজার হাজার যানবাহনের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। তারপরও তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন। এ পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে সবাইকে সচেতন হতে বলছেন তিনি।
আরও পড়ুন: