চিকিৎসকরা বলেন, টিউমারটিসহ ওই রোগীর ওজন ছিল ৫০ কেজি।
Published : 30 Jun 2024, 07:50 PM
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক ব্যক্তির পেট থেকে ১২ কেজি ওজনের টিউমার বের করা হয়েছে।
রোববার দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউমারটি অপসারণ করা হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৫০ কেজি ওজনের এক রোগীর পেটের মধ্যে থাকা টিউমার অস্ত্রোপচার করে বের করা হয়েছে। অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। রোগী বর্তমানে হাসপাতালের পোস্ট অপারেটিভে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।”
৪৫ বছর বয়সি রোগী মো. কামাল হোসেন পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠী উপজেলার সোহাগদল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় রেডিও মেকার।
রোগীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী মৌরিন বেগম বলেন, দুই বছর আগে তার দেবর কামাল হোসেনের পেটে ব্যথা হয়। তখন অর্থের অভাবে গ্রামের হোমিও চিকিৎসকের কাছ থেকে তিনি চিকিৎসা নেন। ব্যথা না কমায় হোমিও চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন।
গত ২২ জুন কামাল হোসেনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ১ নম্বর ইউনিটে অধ্যাপক ডা. জিএম নাজিমুল হকের তত্ত্বাবধায়নে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের পরিচালক জানান, মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জিএম নাজিমুল হকের নেতৃত্বে এ অস্ত্রোপচার হয়েছে।
হাসপাতালের পঞ্চম তলার অপারেশন থিয়েটারে এ অস্ত্রোপচার হয়।
অস্ত্রোপচারে চিকিৎসক দলে আরও ছিলেন, সহকারী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার, ডা. গ্রিন চন্দ্র বিশ্বাস, সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. অনুপ কুমার সরকার ও ডা. মো. হোসাইন শাওন, মেডিকেল অফিসার মো. বায়েজীদ হোসেনসহ ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
অনুপ কুমার সরকার বলেন, “রোগী কামাল হোসেন পেট ফুলা, পেটে ব্যথা, খাবারে অনীহা ও দিনে দিনে ওজন কমে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন তার পেটে সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, তার পেটে বড় সাইজের রেট্রো পেরিটোনিয়াল নামের টিউমার রয়েছে। ৪৫ বছর বয়সি এই রোগীর ওজন মাত্র ৫০ কেজি। অপারেশনটি ছিল খুবই জটিল। সকাল সাড়ে ৯টায় অস্ত্রোপচার শুরু করা হয়। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা সময় লেগেছে এই অপারেশনে।”
রোগীর খালাতো ভাই মো. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ বাদে তেমন কোনো খরচ ছাড়াই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে।
অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেওয়া ডা. জিএম নাজিমুল হক বলেন, “রোগীর পেটের চারপাশে টিউমারটি ছড়িয়ে ছিল। বিশেষ করে, তার পেটের ওপরের অংশ থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত টিউমার বিস্তৃত ছিল। রোগীর খাদ্যনালি সেইফ করে ১২ কেজি ওজনের বড় আকারের টিউমারটি অপসারণ করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “টিউমারটি পরীক্ষার জন্য বায়োপসি টেস্ট করতে পাঠানো হয়েছে। রোগী বর্তমানে সুস্থ আছেন। বায়োপসি রিপোর্ট আসা পর্যন্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকবেন।”
এ ধরনের টিউমার কোনো রোগী বেশি দিন বহন করলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে জানিয়ে ওই চিকিৎসক বলেন, “প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগের চিকিৎসা করানো হলে ঝুঁকির আশঙ্কা কমে যায়।”
কারো শরীরের কোথাও কোনো চাকা বা পেট ভারি হওয়ার মত সমস্যা দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন শের-ই-বাংলা মেডিকেলের এ অধ্যাপক।