Published : 23 May 2024, 02:23 PM
সিলেটে গৃহকর বৃদ্ধি নিয়ে সিটি করপোরেশনের মতবিনিময় সভায় কথা বলার সময় এক নাগরিকের হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়েছেন এক কাউন্সিলর। এ নিয়ে মতবিনিময় সভায় উত্তেজনা ও হট্টগোল দেখা দেয়। এর জেরে কয়েকজন কাউন্সিলর সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান।
বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর আমানউল্লাহ সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। পরে সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিলেট সিটি করপোরেশন-সিসিকের আওতাধীন পুরনো ২৭টি ওয়ার্ডের হোল্ডিং সমূহের অ্যাসেসমেন্ট/রি-অ্যাসেসমেন্ট করারোপ বিষয়ে নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সিসিক। মতবিনিময় সভার শুরুতে সিসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান আরোপিত গৃহকর তৈরির প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন শুরু করেন।
এ সময় উপস্থিত নাগরিকরা ডকুমেন্টারি বন্ধ করে মূল আলোচনায় যাওয়ার অনুরোধ করেন। তখন নুরুল ইসলাম দীনেশ নামেে এক ব্যক্তি মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম তাকে বাধা দিয়ে হাত থেকে মাইক্রোফোনটি কেড়ে নেন।
এ সময় আরও কয়েকজন কাউন্সিলর সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। দুপক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা ও হট্টগোল দেখা দেয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মতবিনিময় সভায় মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কথা বলার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন এক ব্যক্তি। এ সময় নগরীর ৩৪ নম্বর ওর্য়াডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম হাত বাড়িয়ে মাইক্রাফোনটি কেড়ে নেন।
তখন কথা বলার জন্য দাঁড়ানো ব্যক্তি বলেন, “আপনি এটা করতে পারেন না। আমিও রাজনীতিবিদ, আমি আশির দশকে রাজনীতি করেছি। মেয়র আমাকে চিনেন।”
এ সময় সভায় উপস্থিত নাগরিকরাও তাদের পাশে ঘিরে দাঁড়ান। এর মধ্যে কেউ কেউ তাদের থামানোর চেষ্টা করেন।
ওই ঘটনার কিছুক্ষণ পর নগরীর জিন্দাবাজারের বাসিন্দা মো. আমিনুল ইসলাম দীনেশকে সভার মঞ্চে ডাকা হলে তিনি বলেন, “আমি মাইক্রোফোন নিয়ে দাঁড়িয়েছি কথা বলার জন্য, আর আমার হাত থেকে মাইক্রোফোনটা কেড়ে নেওয়া হলো। এটা কি ঠিক হয়েছে?”
তখন সভায় উপস্থিত থাকা সবাই বলেন ‘না’। এ সময় আমিনুল বলেন, “এখানে আমরা যারা এসেছি, সবাই দাওয়াতে এসেছি; মেয়রের দাওয়াতে।”
এ সময় সিটি করপোরেশন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মঞ্চে বসে থাকতে দেখা যায়। এর আগে হট্টগোল চলার সময় মাইক্রোফোন হাতে বার বার শান্ত হতে বলতে শোনা যায় মেয়রকে।
এক পর্যায়ে আমিনুল বলতে থাকেন, “আমরা ইতিহাস শুনতে আসি নাই, আমাদের এটা বলেন, এক টাকা গৃহকর কীভাবে এক হাজার টাকা হয়ে গেল। ১২০ টাকা আট হাজার টাকা কীভাবে হল? এটা আমাদের বুঝিয়ে দেন।
“আমি সিলেট শহরের সন্তান। আমি আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে বলব, একটা বুঝিয়ে দেন আমরা চলে যাব।”
পরে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সভার কার্যক্রম আবার শুরু হয়।
এ বিষয়ে জানতে আমিনুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি বলেন,"আমি এই শহরের একজন নাগরিক; আমি কথা বলার জন্য মাইক্রোফোন হাতে নিয়েছিলাম। কিন্তু একজন কাউন্সিলরের কীভাবে এই সাহস হয়, মতবিনিময় সভায় নাগরিকের মাইক্রোফোনে হাত বাড়িয়ে থাবা দেওয়ার। এই সাহস কীভাবে আসে।?"
মাইক কেড়ে নেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৪ নম্বর ওর্য়াড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “উনি প্রজেক্টরে কার্যক্রম চলার সময় হঠাৎ কথা বলার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। মাঝখানে কথা বলতে দাঁড়ানোই আমি এগিয়ে গিয়েছি।
“তারপর তো উনি কী করেছেন তা আপনারাই দেখেছেন। এটা শেষ হয়ে গেছে।"
সভার কার্যক্রম আবার শুরুর পর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যে মেয়র বলেন, “আগামী ২-৪ দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের সঙ্গে সাধারণ সভা করে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। সিলেটের নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান পরিষদ কাজ করবে।
“আমরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব না, যেটি নাগরিকদের জন্য কষ্টকর হয়। আমরা নাগরিকদের মতামতকে মূল্যায়ন করে সহনীয় মাত্রায় কর নির্ধারণ করব।”
মেয়র আরও বলেন, “বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় জরুরি সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে। কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়ে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। নাগরিক সেবা প্রদানে সিসিকের কোনো স্টাফ যদি অসদাচরণ করেন, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
মতবিনিময় সভায় মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন,"বর্তমান পরিষদ খুব আন্তরিকতার সঙ্গে নাগরিকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কর পরিশোধ করা নাগরিকদের দায়িত্ব। নিয়মিত কর পরিশোধ করলে সিটি কর্পোরেশন অনেক দূর এগিয়ে যাবে।”
তবে নাগরিকদের মতামতকে মূল্যায়ন করে সিলেট সিটে করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে যৌক্তিক, প্রাসঙ্গিক এবং সহনীয় মাত্রায় কর ধার্য্য করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সাহসিকতার সঙ্গে হকারমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন নগর করতে পেরেছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী। ঠিক একইভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে চলমান ইস্যুটি দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করতে পারবেন তিনি।
সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য রঞ্জিত চন্দ্র সরকার, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রুমা চক্রবর্তী এ সময় বক্তব্য রাখেন।