বজ্রপাতে ছয় জেলায় ১০ জনের মৃত্যু

নরসিংদীকে ৪ জন, পাবনায় ২ জন এবং বাকি চার জেলায় একজন করে মারা যান।    

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2023, 04:51 PM
Updated : 23 May 2023, 04:51 PM

দেশের বিভন্ন জেলায় বজ্রপাতে ১০ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে।

মঙ্গলবার নরসিংদী, পাবনা, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, নেত্রকোণা ও সুনামগঞ্জ থেকে এই মৃত্যুর খবর এসেছে।

এদের মধ্যে নরসিংদীকে ৪ জন, পাবনায় ২ জন এবং অপর জেলাগুলোয় একজন করে মারা যান।    

নরসিংদীতে ৪ জনের প্রাণহানি

নরসিংদীর রায়পুরা, মনোহরদী ও শিবপুর উপজেলায় বজ্রপাতে নারী ও শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার পৃথক সময়ে রায়পুরার শ্রীনগর ইউনিয়ন ও নিলক্ষা ইউনিয়ন, মনোহরদীর দৌলতপুর ইউনিয়ন এবং শিবপুরের সাধারচরে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরের চর গ্রামের মোমরাজ মিয়ার স্ত্রী সামসুন নাহার (৪৫) ও নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের ইসমাইল মিয়ার ছেলে জাবেদ মিয়া (১২), দৌলতপুর ইউনিয়নের পাতরদিয়া গ্রামের মৃত বাদল মিয়ার ছেলে প্রবাসী রায়হান মিয়া (৩০) এবং সাধারচরের খোরশেদ মিয়ার ছেলে কৃষক খোকন মিয়া (৩০)।

শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জালাল উদ্দিন বলেন, বেলা ১১টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে গৃহবধূ সামসুন নাহার খড়ের গাদা তৈরির জন্য বাড়ির পাশের একটি জমি থেকে খড় আনতে গিয়েছিলেন। ওই সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে স্বজনরা তার মরদেহ উদ্ধার কলে।

নিলক্ষা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান স্বজনদের বরাতে জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে ইউনিয়নের গোপীনাথপুরে বাড়ির সামনে ফুটবল খেলছিল শিশু জাবেদ মিয়া। ওই সময় বজ্রপাতে জাবেদ মিয়ার মৃত্যু হয়।

দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ফরিদ মাহমুদ খান বাহালুল স্বজনদের বরাতে জানান, দুপুরে বাড়ির অদূরে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন পাতরদিয়া গ্রামের প্রবাসফেরত রায়হান মিয়া। হঠাৎ বজ্রসহ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেন। পথে বাড়ির কাছে পৌঁছামাত্র বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মারা যান রায়হান মিয়া। পরে স্বজন ও স্থানীয়রা তার লাশ উদ্ধার করেন। দুই মাস আগে ছুটিতে দেশে আসেন কাতার প্রবাসী রায়হান মিয়া।

শিবপুরের সাধারচরের স্থানীয়রা জানান, সকালে কৃষিজমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে পড়ে যান সাধারচর এলাকার খোরশেদ মিয়ার ছেলে কৃষক খোকন মিয়া (৩০)। পরে তাকে সেখান থেকে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। 

পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক নিয়াজ মোর্শেদ জানান, কৃষক খোকন মিয়াকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

পাবনায় নিহত ২ শ্রমিক, আহত ১৩

মাঠে কাজ করার সময় পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বজ্রপাতে ২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৩ জন।

মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার বেতুয়ান গ্রামে ধান কাটার সময় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন জেলার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা গ্রামের শাকিল হোসেন (১৯) ও রমিজ উদ্দিন (৩০)।

আহতদের ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসারত শ্রমিকরা জানান, দিলপাশার ইউনিয়নের বেতুয়ান গ্রামের বাওনজান এলাকায় বোরো ধান কাটছিলেন ১৫ জন শ্রমিক। বিকালে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এতে শ্রমিকরা পাশের একটি খোলা ঘরে আশ্রয় নেন। 

ওই সময় বজ্রপাতে ওই ঘরে থাকা ৫ জন শ্রমিক মারাত্মক আহত হন। অন্য শ্রমিকরা তাদের উদ্ধার করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক দুই জনকে মৃত ঘোষণা করেন। 

ভাঙ্গুড়া থানার ওসি রাশিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। হাসপাতালে চিকিৎধীন আহতদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

শরীয়তপুরে পানি আনতে  গিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যু

শরীয়তপুরে গোসাইরহাটে টিউবওয়েল থেকে পানি আনতে গিয়ে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের রসিদ সরদার পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত কৃষক মাঈনউদ্দিন মান (২৭) কোদালপুর  ইউনিয়নের মহিউদ্দিন মানের ছেলে।

কোদালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান  এস এম মিজানুর রহমান সরদার বলেন, ইউনিয়নার রসিদ সরদার পাড়া গ্রামে মহিউদ্দিন মানের ছেলে মাঈনউদ্দিন বাড়িতে খাবার পানি আনতে গিয়ে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মাঈনকদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

গোসাইরহাট থানার ওসি মো. আসলাম সিকদার বলেন, “কোদালপুরে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি।”

চাঁদপুরে আম কুড়াতে গিয়ে একজনের মৃত্যু

চাঁদপুর সদর উপজেলার আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে একজন মারা গেছেন।  

রামপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ছোট সুন্দর গ্রামে মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মো. হাসান মিজি (৪৫) ওই গ্রামের প্রয়াত মো. কামাল উদ্দিন মিজির ছেলে।

রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আল মামুন পাটওয়ারী বলেন, “প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে হাসানের মৃত্যু হয়েছে।”

হাসানের ভাতিজা রামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মারুফ মিজি বলেন, ঝড়ের সময় হাসান বাড়ির পাশের বাগানে আম কুড়াচ্ছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে নৌকা থেকে নদীতে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় বজ্রপাতের শব্দে নৌকা থেকে ছিটকে নদীতে পড়ে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় বজ্রপাতের আহত হয়েছেন এক কৃষক।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বাদেহরিপুর গ্রামের পাশে বরইয়া নদীতে এ ঘটনা ঘটে বলে জয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সঞ্জয় রায় চৌধুরী জানান।

নিহত ১৫ বছর বয়সি ওমর ফারুক ওই গ্রামের আলা উদ্দিনের ছেলে। সে জয়শ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। আহত কৃষক আবুল কাশেম একই গ্রামের বাসিন্দা।

জয়শ্রী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিলাল হোসেন জানান, বরইয়া নদী দিয়ে নৌকায় করে ধান বিক্রির উদ্দেশে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। তাদের সঙ্গে ওমর ফারুকও ছিল।

“সকালে হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দে ওমর ফারুক নৌকা থেকে ছিটকে নদীতে পড়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বজ্রপাতে নৌকায় থাকা আবুল কাশেমও আহত হয়েছেন।”

নেত্রকোণায় মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু

নেত্রকোণার মদন উপজেলায় হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়া।

নিহত ৪০ বছর বয়সি জয়নাল আবেদীন উপজেলার বাগজান গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।

ইউএনও জানান, জয়নাল সকালে বাড়ির সামনের বিলে মাছ ধরতে যান। এ সময় হালকা বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে আহত হন তিনি। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে জয়নালের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের খোঁজ-খবর নেন।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই কৃষকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা অনুদান দেন ইউএনও।

বজ্রপাতে নৌকা থেকে নদীতে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু, আহত ১

নেত্রকোণায় মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু

নরসিংদীতে বজ্রপাতে ৪ জনের প্রাণহানি