“অনেকটা ভোটারদের চাপে নিরুপায় হয়েই আমাদের প্রার্থী হতে হচ্ছে”, বলছিলেন কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতা।
Published : 28 May 2023, 11:20 PM
এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণার মধ্যে খুলনা সিটি করপোরেশনে বিএনপির কেউ মেয়র পদে প্রার্থী হননি; তবে দলটির অন্তত আট নেতাকর্মী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছে। নির্বাচনে আছে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ নেতাকর্মীও।
জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারা দলের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে লড়ছে তাদেরকে আজীবন বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রের কাছে শনিবার সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
বিএনপি দলের নেতাকর্মীদের ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে মানা করলেও এক সময়ের শরিক জামায়াতে ইসলামী বলছে, এ ব্যাপারে তাদের কোনো নিষেধাজ্ঞা বা অনুমতি কোনোটাই নেই।
আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠেয় খুলনা সিটি করপোরেশনে ষষ্ঠ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন তালুকদার আব্দুল খালেক। বিএনপি না থাকলেও এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী।
বিগত দিনে খুলনা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে তিনবার জয় পেয়েছেন বিএনপি নেতারা, বাকি দুবার জিতেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির জেলা ও মহানগরীতে শক্তিশালী ভিত্তি রয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ৩১ ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টিতে আওয়ামী লীগ ও ৯টিতে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হন। বাকি ১০ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও নির্দলীয় প্রার্থী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ১০ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের মধ্যে বিএনপির ছিলেন একজন।
এবার নির্বাচনে বিএনপির নেতাকর্মী যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের অনেকেই আগে কাউন্সিলর ছিলেন বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ সাজ্জাদ হোসেন তোতন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক আশফাকুর রহমান কাঁকন, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব কায়সার, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী ফজলুল কবীর টিটো, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি শমসের আলী মিন্টু, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর আমান উল্লাহ আমান, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে দৌলতপুর থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এ কে এম মোসফেকুস সালেহীন এবং সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নগর বিএনপির সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাজেদা খাতুন প্রার্থী হয়েছেন।
তবে শমসের আলী মিন্টুর মনোনয়ন ফরম বাতিল হয়েছে। প্রার্থিতা ফিরে পেতে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন।
এ ব্যাপারে নগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীদের সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাউন্সিলর পদে আটজন প্রার্থী হওয়ায় দু-একদিনের মধ্যেই তারা দল থেকে বহিষ্কার হবেন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে শনিবার সুপারিশ পাঠনো হয়েছে।
মনা আরও বলেন, “বিএনপি যেহেতু নির্বাচন বর্জন করেছে, তাই নেতাকর্মীর ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”
১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক কাউন্সিলর আশফাকুর রহমান কাঁকন রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের মধ্যে একাধিকবার কাউন্সিলর হয়েছেন এমন নেতা আছেন। আমরা কাউন্সিলর হয়ে এতদিন ওয়ার্ডের মানুষের সেবা করেছি; তাদের সুখ-দুঃখে পাশে ছিলাম। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের সঙ্গে মিলে-মিশেই আমাদের কাজ করতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “এখন নির্বাচন এসেছে। ওয়ার্ডের লোকজনের চাপ আছে প্রার্থী হতে; তাই প্রার্থী হয়েছি। অনেকটা ভোটারদের চাপে নিরুপায় হয়েই আমাদের প্রার্থী হতে হচ্ছে।”
কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপির আরেক নেতা বলছেন, “কাউন্সিলর পদে নির্বাচন দলগতভাবে হয় না। ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেবেন। নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।”
ভোটে জামায়াতের পাঁচ নেতা
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী না থাকলেও পাঁচটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন জামায়াতের নেতাকর্মী। প্রার্থী হতে বা ভোট দিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাদের নেতাকর্মীরা ভোট দিতে যাবেন বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
জামায়াতের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১ নম্বর ওয়ার্ডে দৌলতপুর থানা জামায়াতের নায়েবে আমির আজিজুর রহমান স্বপন, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নগর জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির মাস্টার শফিকুল আলম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে সংগঠনের ওয়ার্ড শাখার আমির মশিউর রহমান রমজান, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে সোনাডাঙ্গা থানা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি মনিরুল ইসলাম পান্না এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে নগর জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল প্রার্থী হয়েছেন।
কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও খুলনা নগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল সাংবাদিকদের বলেন, তাদের কেউ দলগতভাবে কাউন্সিলর প্রার্থী হননি, সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ভোট দিতে যাওয়ার ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি কিংবা নিষেধাজ্ঞা নেই।
হেলাল আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট এখন কার্যকর নেই। ফলে বিএনপির সিদ্ধান্ত তাদের নিজস্ব।
নগর জামায়াতের ওই নেতা আরও জানান, দল থেকে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় নেতাকর্মীরা ভোট দিতে যাবেন। কাউন্সিলর পদে পছন্দের প্রার্থীকে তারা ভোট দেবেন। তবে মেয়র পদে কাকে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে চারজন ছাড়াও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৬ এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
খুলনা সিটিতে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৪৩ হাজার ১৩১। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটার ছিল ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। ভোট পড়েছিল ৩ লাখ ৬ হাজার ৬৩৬টি; অর্থাৎ ৬২ শতাংশ।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছিলেন ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট।