“মরদেহ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিশ্চিত হতে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।”
Published : 03 Jun 2024, 05:26 PM
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত লাগোয়া রামু উপজেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সদস্যদের সঙ্গে চোরাকারবারিদের গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে।
এ সময় বিজিবির ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ এবং একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
সোমবার ভোরে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের মরিচ্যাচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান।
এ ঘটনায় বিজিবির গুলিতে নেজাম উদ্দিন নামে চোরাকারবারি চক্রের এক সদস্য নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে বিজিবির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিজিবি কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলছেন, “নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিজিবির মাদক ও চোরাচালান বিরোধী নিয়মিত টহলদলের ওপর ‘নেজাম ডাকাত’ চোরাকারবারি সিন্ডিকেট গুলি করে। আত্মরক্ষায় বিজিবিও পাল্টা গুলি করে।
“এ সময় বিজিবির চারটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা ও বার্মিজ সিগারেট উদ্ধার করা হয়।”
গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বাবুল বলেছেন, “বিজিবির সঙ্গে চিহ্নিত চোরাকারবারিদের গোলাগুলি হয়েছে। এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের নেজাম উদ্দিন নামের এক চোরাকারবারি নিহত হয়েছে বলে শোনা গেছে। পরে নিহতদের মরদেহ তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিয়ে গেছে।”
খুরুশকুল ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া এলাকা থেকে সোমবার বেলা ১টার দিকে নেজাম উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাজাহান সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, “কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার বহুল আলোচিত ডাকাত আবুল বশর কয়েক বছর আগে তার পরিবার নিয়ে ঘোনাপাড়া এলাকায় এসে বসবাস শুরু করে। সোমবার সকালে বশরের ছেলে নেজামের মরদেহ তার বাড়িতে নিয়ে আসে তার চক্রের সদস্যরা।
“খবর পেয়ে গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।”
ইউপি চেয়ারম্যান শাহাজাহান বলেন, “আবুল বশর একজন ‘চিহ্নিত ডাকাত’ ছিলেন। তার ছেলেরাও ডাকাতি ও চোরাকারবারে জড়িত বলে এলাকার লোকজন জানে। নেজাম ডাকাত গর্জনিয়ায় বিজিবির সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে বলে বিভিন্নভাবে শোনা যাচ্ছে।”
ছেলের মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে আবুল বশর বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তার ছেলে নেজাম উদ্দিন রামুর গর্জনিয়ায় বন্ধুর বাড়িতে যায়। রোববার রাত ১২টার দিকে মোবাইল ফোনে ছেলের সঙ্গে তার কথাও হয়।
সোমবার সকালে নেজামের বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে জেগেই খবর পান, গর্জনিয়ায় বিজিবির গুলিতে ছেলে নিহত হয়েছে।
তিনি বলেন, “বেলা ১০টার দিকে অজ্ঞাত পরিচয় একজন ব্যক্তি অটোরিকশায় করে নেজামের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে। ওই ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছে, গর্জনিয়া এলাকার কয়েকজন যুবক লাশটি গাড়িতে তুলে দিয়েছে।”
“স্থানীয়দের কাছে শুনেছি, মিয়ানমার থেকে সিগারেট পাচারকে কেন্দ্র করে বিজিবির গুলিতে আমার ছেলে মারা গেছে।”
অল্প কিছু সিগারেটের জন্য বিজিবি ছেলেকে গুলি করতে পারে, বিশ্বাস হয় না জানিয়ে আবুল বশর বলেন, “আমার ছেলের ও পারিবারিক প্রতিপক্ষের কতিপয় লোকজন বিজিবির সঙ্গে যোগসাজশ করে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। ”
বিজিবির সঙ্গে চোরাকারবারির গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহতের খবর গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পুরিদর্শক সাইফুল ইসলামও শুনছেন।
“কিন্তু যিনি নিহত হয়েছেন, তার মরদেহ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিশ্চিত হতে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।” বলছিলেন তিনি।
নেজামের গুলিবিদ্ধ লাশ তার বাড়ি থেকে উদ্ধারের কথা কক্সবাজার সদর থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলছিলেন, “আমরা নেজামের লাশ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। তার বুকের নিচের অংশে গুলি লেগেছে। তবে কিভাবে তার গুলি লেগেছে বা কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সেটা আমরা জানি না।“
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম বলেছেন, নেজাম নামের ওই ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়ে ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। তাকে কারা গুলি করেছে এ বিষয়ে জানতে পুলিশ কাজ করছে।
নেজাম নিহত হয়েছেন কি-না এ প্রসঙ্গে বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, “কেউ নিহত হয়েছে কি-না সেটা এখনও নিশ্চিত না। নিহত হলে মরদেহ পাওয়া যেত।”
এদিকে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাহল আহমেদ নোবেল জানান, গোপন সংবাদে ভালুখাইয়া বিওপির আওতাধীন রাজঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯৮ কার্টন বার্মিজ সিগারেট এবং ২০ হাজার ইয়াবা আটক করা হয়।
এ সময় নেজাম ডাকাতের নেতৃত্বে ১০০-১৫০ জন সংঘবদ্ধ হয়ে বিজিবি টহল দলের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করে। তারা ৫০-৬০ রাউন্ড গুলি চালায়। আত্মরক্ষায় বিজিবিও পাল্টা গুলি করে।
ওই ঘটনায় হত্যা ও অপহরণসহ একাধিক মামলার প্রধান আসামি মো. নেজাম গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানা যায়।
এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।