“২০১৩ সালে সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের গাড়ি বহরে হামলার মিথ্যা একটি মামলায় বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানীকে আসামি করা হয়।”
Published : 17 Sep 2024, 08:44 PM
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও নীলফামারী-২ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামন নূরের বিরুদ্ধে নীলফামারীতে নতুন করে আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
এ নিয়ে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের হলো বলে নীলফামারী সদর থানার পরির্দশক (তদন্ত) এমআর সাঈদ জানান।
আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে সবশেষ মামলাটি হয় রোববার বিকালে। ২০১৪ সালে জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির নেতা গোলাম রব্বানীকে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলাটি করেন তার স্ত্রী শাহানাজ বেগম।
সদর আমলি-১ আদালতের বিচারক জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীন কবির মামলাটি আমলে নিয়ে সদর থানাকে এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী মমতাজ বেগম মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মমতাজ বেগম জানান, মামলায় আসাদুজ্জামান ছাড়াও এই মামলায় সদর থানার সাবেক ওসি বাবুল আকতার, এসআই মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হকসহ ৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত পরিচয় আসামি আরও অন্তত এক হাজার।
পরির্দশক এমআর সাঈদ বলেন, “রোববার আদালতে দায়ের হওয়া মামলাটি সাত কার্য দিবসের মধ্যে এফআইআর হিসেবে গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সময়ের মধ্যেই রের্কড সম্পন্ন করা হবে।”
মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুসফিকুল ইসলাম রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন মুন, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিদ মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান বুলেট, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাহিদুল ইসলাম নিক্সন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল হাসান শাহ আপেল, সাবেক সভাপতি সজল কুমার ভৌমিক, লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যাম চরণ রায়, একই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, পলাশবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম তালুকদার ও টুপামারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন চৌধুরী।
মামলার বরাতে বাদীর আইনজীবী মমতাজ বেগম বলেন, “২০১৩ সালে সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের গাড়ি বহরে হামলার মিথ্যা একটি মামলায় গোলাম রব্বানীকে আসামি করা হয়। ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিকালে সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের নেতৃত্বে ওসি বাবুল আকতার, এসআই মোস্তাফিজারসহ একহার নামীয় ৪১ জন এবং অজ্ঞাত পরিচয় আসামিরা বাদি স্বামীর খোঁজে লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুবাছুড়ি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে রব্বানীকে না পেয়ে বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে।
“এ সময় পরিবারের লোকজনকে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয় আসামিরা। জীবন রক্ষার জন্য গোলাম রব্বানী পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ঠনঠনিয়া গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি সকালে পুলিশ ও র্যাব পরিচয়ে ১৫ থেকে ১৬ ব্যক্তি তাকে তুলে নিয়ে যায়। বিষয়টি জানার পর গোলাম রব্বানীর স্ত্রী শাহানাজ স্বামীর খোঁজে আসামিদের কাছে গেলে তারা ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।”
এর তিনদিন পর ১৮ জানুয়ারি সকালের দিকে জেলা সদরের নীলফামারী-ডোমার সড়ক সংলগ্ন পলাশবাড়ি ইউনিয়নের একটি বাঁশঝাড়ে গোলাম রব্বানীর মৃতদেহ দেখতে পেয়ে এলাকার লোকজন পরিবারকে খবর দেয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার বাদী শাহানাজ বেগম বলেন, “আমার স্বামীকে শারীরিক নির্যাতনসহ মাথায় গুলি করে হত্যার পর ফেলে রাখা হয়েছিল। সে সময় আসামিরা অনেক ক্ষমতাধর ছিলেন। থানা পুলিশ, আইন-আদালত সব আসামিদের আয়ত্বে ছিল।
“ওই সময় মামলা করলে আমি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতাম। এখন দেশে আইন-আদালত নিরপেক্ষ হওয়ায় মামলা দায়ের করেছি। সুষ্ঠ তদন্ত হলে আমি ন্যায় বিচার পাবো।”
২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিকালে জেলা সদরের রামগঞ্জ বাজারে সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের গাড়ি বহরে হামলা হয়। তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগের চার নেতাকর্মী ও একজন পথচারিসহ পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনায় ওই রাতে সদর থানার ওসি (তদন্ত) বাবুল আকতার বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানী। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান তদন্ত শেষে ২০৬ জনের নামে আদালতে অভিযোপত্র দেন। বর্তমানে বিচারধীন আছে মামলাটি।
এর আগে গত ৪ অগাস্ট জেলা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে একই আদালতে গত ৫ সেপ্টেম্বর একটি মামলা দায়ের করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুস সালাম বাবলা। এই মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, সদর থানার সাবেক ওসি তানভিরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১২৬ জনের বিরুদ্ধে। এ মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় আসামি ৩০০।
অপরদিকে ১৮ জুলাই থেকে ৪ অগাস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অবৈধভাবে দেশীয় অস্ত্রসহ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার, বলপ্রয়োগ এবং আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা-মামলার নামে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে একই আদালতে ৯ সেপ্টেম্বর আসাদুজ্জামান নূরসহ ৬০ জনকে আসামি করা হয়।
এ মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় আসামি ৩০০। মামলাটি দায়ের করেন নীলফামারী বি.এম কলেজের শিক্ষার্থী মো. সৌমিক হাসান সোহান।
সদর থানার পরির্দশক (তদন্ত) এমআর সাঈদ বলেন, “আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলাও এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।”