লালমাই উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা ২১ গর্ভবতী নারীর প্রতি বিশেষ নজর রাখছে স্বাস্থ্য বিভাগ
Published : 28 Aug 2024, 09:57 PM
ভারত থেকে নেসে আসা পানি ও টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় কুমিল্লার লালমাই উপজেলার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে এক নারী সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩ অগাস্ট গভীর রাতে ফাতেমা আক্তার নামে এক নারী কন্যাসন্তানের জন্ম দেন বলে জানান উপজেলা উপসহকারী মেডিকেল অফিসার সঞ্জয় চন্দ্র পাল।
ফাতেমা আক্তার আশেকের তুলাতুলী গ্রামের কাঠমিস্ত্রী সামছুল হকের স্ত্রী। তিনি ও কন্যাসন্তান ভাল আছে বলে জানান চিকিৎসক।
সঞ্জয় চন্দ্র পাল সাংবাদিকদের বলেন, “বন্যার মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের অনেকগুলো মেডিকেল টিম কাজ করছে। সন্তানসম্ভাবা ফাতেমা আক্তার আমার অধীনে চিকিৎসায় ছিলেন। ২২ অগাস্ট তাদের বাড়িতে পানি ওঠে। চিকিৎসার সুবিধার্থে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে আমি তাদের বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করি।
“২৩ অগাস্ট রাত ১টায় বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় আমি এবং বাগমারা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) কেয়া বড়ুয়া গর্ভবতী ফাতেমার নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থা করি।”
তিনি বলেন, ফাতেমা একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছেন। তাৎক্ষণিক সন্তানটির নাম রাখা হয়েছে ‘সুবর্ণা’।
নবজাতকের মা ফাতেমা আক্তার বলেন, “আশ্রয়কেন্দ্রে গভীর রাতে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে কন্যাসন্তানের মা হয়েছি। আমরা সুস্থ আছি। আমাদের চিকিৎসায় ওষুধ ও শিশু খাদ্যের ব্যয় বাবদ ‘উদ্দীপন’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন চার হাজার টাকা অর্থ সহায়তা করেছে। পানি কিছুটা কমে যাওয়ায় আমরা এখন বাড়িতে আছি।”
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টিতে বন্যা দেখা দিয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম প্লাবিত হয়েছে লালমাই উপজেলা। অন্যান্য উপজেলায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন পার করলেও লালমাইয়ে এই সংখ্যা হবে প্রায় ১০ হাজার।
মূলত আশপাশের উপজেলাগুলো থেকে বন্যার পানি প্রবেশ করায় এ উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বেড়েছিলো। বর্তমানে পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। নিজেদের বাড়িঘরে পানি ওঠায় বানভাসি অনেকে উঁচু এলাকায় আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ওঠেছেন।
আবার অনেক বানভাসি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষিত উপজেলা মডেল মসজিদসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে শিশু, প্রতিবন্ধী ও অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও রয়েছেন। আর তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে একজন মেডিকেল অফিসারের নেতৃত্বে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ গঠন করেছেন নয়টি বিশেষ টিম।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, বুধবার বিকাল পর্যন্ত উপজেলার ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই হাজার ৩৪৭ জন মানুষ অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে এক হাজার একজন নারী, ৮২১ জন পুরুষ, ৪৯৮ জন শিশু, ২১ জন গর্ভবতী নারী ও ছয়জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন। আশ্রিত মানুষদের খাবারের যোগান দিচ্ছে প্রশাসন, রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন, প্রবাসী ও স্বেচ্ছাসেবকরা।
লালমাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সৈয়দা তাহসিন সিফাত বলেন, “বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিয়নে কর্মরত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারী মেডিকেল অফিসার এবং পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকারাও কাজ করছেন। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা হচ্ছে।”
লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ হেলাল চৌধুরী বলেন, বন্যার শুরুতেই উপজেলার ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে তিন হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নেয়। তাদের খাদ্য, নিরাপত্তা ও চিকিৎসা নিশ্চিতে একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তি সহায়তার পাশাপাশি সরকারিভাবে আশ্রিতদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পানি কমতে থাকায় কিছু মানুষ বাড়ি ফিরেছেন।
এদিকে বুধবার বিকালে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক উপজেলার বাকই উত্তর ইউনিয়নের নুরপুর আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।