দেশের সড়ক-মহাসড়ক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় বন্দরে আটকে থাকা উপকরণ কারখানাগুলোতে আনা যাচ্ছে না।
Published : 12 Aug 2024, 12:09 PM
ক্রেতা না থাকায় দেশীয় পোশাকের অন্যতম বৃহৎ পাইকারী বাজার শেখেরচর-বাবুরহাটকে ঘিরে নরসিংদীতে গড়ে উঠা বস্ত্রশিল্পে স্থবিরতা বিরাজ করছে। নানা সংকটে একই অবস্থা জেলার রপ্তানি নির্ভর বস্ত্র কারখানাগুলোতেও।
কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘিরে দেশে যে অস্থির সময় চলছে, তাতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলছেন টেক্সটাইল, ডাইংসহ বস্ত্রশিল্প মালিক, ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্পাঞ্চল মাধবদীতে টেক্সটাইলসহ সংশ্লিষ্ট বস্ত্র কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছিল। এতে লোকসানের মুখে ছিলেন ব্যবসায়ীরা।
পরে ছাত্র-জনতার আন্দোলন পরিস্থিতিতে সব কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তা যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে দেখা দেয়।
বস্ত্রশিল্প সংশ্ষ্টি কারখানাগুলো একটি অপরটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বস্ত্র কারখানাগুলো যেমন টেক্সটাইল শিল্পের ওপর নির্ভরশীল, তেমনি টেক্সটাইলগুলো নির্ভরশীল রং, সুতা, ক্যামিকেলসহ বিভিন্ন ধরনের আমদানি নির্ভর উপকরণের ওপর।
কিন্তু বিভিন্ন কারখানার আমদানি করা উপকরণ বন্দরেই আটকে আছে। দেশের সড়ক-মহাসড়ক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় এসব উপকরণ কারখানাগুলোতে আনা যাচ্ছে না।
তবে শিল্পমালিকরা বলেন, সরকার পতনের পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় বেশিরভাগ কারখানায় পুনরায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। আগের আমদানি করা রং, সুতাসহ বিভিন্ন উপকরণের ওপর নির্ভর করে অনেকেই কারখানা চালু করেছেন।
কিন্তু পাইকারী কাপড়ের বাজার শেখেরচর-বাবুরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় বেচাকেনা না থাকায় ও রপ্তানি করতে না পারায় উৎপাদন করা বস্ত্র জমা হচ্ছে গোডাউনে।
মাধবদী পৌর এলাকার এ এন টেক্সটাইলের স্বত্তাধিকারী মো. আবুল মিয়া বলেন, “এ শিল্পের অন্যতম কাচামাল রং ও সুতা চাহিদামত পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানি নির্ভর এসব কাঁচামাল পোর্টে আটক থাকায় সমস্যা হচ্ছে। এরমধ্যে যেসব পণ্য উৎপাদন হচ্ছে সেগুলোও বিক্রি বন্ধ। দেশের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।”
এদিকে অর্থনৈতিক মন্দাভাব মোকাবেলা করে কারখানা চালু রাখতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে মালিকদের। অনেক কারখানায় শ্রমিকরা এখনো যোগদান না করায় ও প্রয়োজনীয় উপকরণ না থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তাছাড়া লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতো আছেই।
নরসিংদী শহরের চৌয়ালা এলাকার মেসার্স আলিফ লুঙ্গির কর্ণধার জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া সুমন বলেন, “শেখেরচর বাবুরহাটে আমাদের বিক্রয় কেন্দ্র। কিন্তু এখন হাটে ক্রেতা না আসায় বেচাকেনা একেবারেই কম।
“তবে কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক অবস্থায় আসতেছে। কাঁচামাল সুতা, তুলাসহ আগের মালামাল দিয়েই এখনও চলছে। আর অর্থনৈতিক মন্দাভাবতো রয়েই গেছে।”
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এর সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “সারা দেশের সমস্ত সেক্টরেই অস্থির অবস্থা। ব্যবসায়িক পরিবেশও এক প্রকার স্থবির হয়ে গেছে। বিশেষ করে সরবরাহ এবং বিপণন ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। যা এখনো পর্যন্ত কেটে উঠেনি।
“বিশেষ করে দেশীয় বস্ত্রশিল্পগুলো যেখানে হাটবাজার কেন্দ্রিক বেচাকেনা হয়, সেখানে মানুষের পদচারণা অনেক কম।”
তিনি আরও বলেন, “এখনও আমাদের শ্রমিকরা ফিরে আসেনি ফ্যাক্টরিগুলোতে, মাঝখানে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদনে কাঁচামালও আমরা ঠিকঠাক মতো পাচ্ছি না।
“বিশেষ করে পোর্টের অচলাবস্থার কারণে আমদানি পণ্য যেগুলো কাচামাল রয়েছে সেগুলোরও অপ্রতুল অবস্থা এবং আমাদের ক্রেতারও কিন্তু সংকট। স্থানীয় এবং বিদেশি বাজার দুইটার ক্ষেত্রেই কিন্তু একটা স্থবির অবস্থা দেখা দিয়েছে।”
এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, “আমরা মনে করি দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে দ্রুততম সময়ে এটাকে অন্যতম প্রাধান্য দিয়ে, এই ব্যবসায়িক পরিবেশকে উন্নত করা দরকার। ”