ঘন কুয়াশায় ৫ ট্রলারে লঞ্চের ধাক্কা, ২ জেলে নিখোঁজ, ভাঙচুর-লুটপাট

লঞ্চের যাত্রীরা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানার পুলিশ আসে।

বরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2023, 09:38 AM
Updated : 30 Jan 2023, 09:38 AM

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় কালাবদর নদীতে কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণ হারানো একটি লঞ্চের ধাক্কায় পাঁচটি ট্রলার দুমড়ে-মুচড়ে ডুবে গেছে; এ সময় নদীতে নিখোঁজ হয়েছেন দুই জেলে।

সোমবার ভোর রাতে চর শেফালী লঞ্চঘাট এলাকায় এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জেলে ও স্থানীয় লোকজন ‘এমভি প্রিন্স অব রাসেল-৫’ লঞ্চটিতে ব্যাপক ভাঙচুর, কর্মচারীদের মারধর ও লুটপাট চালায় বলে জানান উলানিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন।  

নিখোঁজ দুই জেলে হলেন- হিজলা উপজেলার বরজালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. বাকীউল্লাহ সিকদার (৪০) এবং একই ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাকের মৃধা (৩৫)।

‘এমভি প্রিন্স অব রাসেল-৫’ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. সাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববার সন্ধ্যায় তারা ঢাকা থেকে ভোলার বোরহানউদ্দিনের উদ্দেশে রওনা দেন। সোমবার ভোররাত ৩টার দিকে কালাবদর নদীতে পৌঁছালে ঘন কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তখন মাস্টার চরশেফালী ঘাটে লঞ্চ ভেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

ঘাটের চারপাশে জাল ফেলে জেলেরা পন্টুনের পাশে নৌকা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। ঘাটে যাওয়ার সময় নদীতে ফেলা জালে লঞ্চের ডান পাশের পাখা আটকে যায়। বাম পাশের পাখা চালু থাকায় লঞ্চ ঘুরে পন্টুনের পাশে জেলে নৌকার উপর উঠে যায়। এতে কয়েকটি নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সুপারভাইজার অভিযোগ করেন, “এরপর ৩০ থেকে ৪০ জন লাঠিসোটা নিয়ে লঞ্চে উঠে মাস্টার মজিবর রহমানকে বেধড়ক পেটায়। এ ছাড়া লঞ্চে ব্যাপক ভাঙচুর করে। মাস্টারকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে মাসুদ ও ইলিয়াসকে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে আমাকে ধরে নামিয়ে একটি ক্ষেতের মধ্যে নিয়ে পিটিয়েছে। পাঁচ লাখ টাকা না দিলে জবাই করারও হুমকি দেয়।“

পরে লঞ্চের যাত্রীরা জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ আসে এবং সুপারভাইজারকে উদ্ধার করে। তিনি এখন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

সাইদুর আরও অভিযোগ করেন, পরে এলাকার কয়েকশ লোক জড়ো হয়ে লঞ্চে তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা লঞ্চের সব গ্লাস ভাঙচুর করেছে। দেড়শ কাটন ফল, নগদ ২০ হাজার টাকা, দুই ব্যারেল ডিজেল লুট করেছে। লঞ্চের তেলের লাইন ভেঙে ফেলেছে। এতে বিপুল তেল নদীতে ভেসে গেছে।

মেহেন্দিগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাদের ফরাজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লঞ্চের ধাক্কায় কয়েকটি জেলে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই জেলে নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারে ডুবুবিরা তল্লাশি চালাচ্ছে।“

ট্রলার ভাড়া করে লঞ্চে থাকা দেড় শতাধিক যাত্রীকে গন্তব্যে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।

উলানিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, লঞ্চের পাঁচটি জেলে নৌকা চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে ডুবে গেছে। জেলেরা লাফিয়ে নদীতে পড়ে রক্ষা পেয়েছে। তবে দুই জেলে নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরিদল চেষ্টা করছে।

ফারুক হোসেন আরও বলেন, “ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা লঞ্চের কর্মচারীদের মারধর, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। পুলিশের সঙ্গেও তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান এসে জনতাকে শান্ত করেছেন।”

বর্তমানে লঞ্চটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।