রংপুরে ইটভাটার ব্যবসায়ের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

সিলেটের একটি চেকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে মাহফুজার রহমান নামের এই ব্যক্তি এখন রংপুর কারাগারে রয়েছেন।

রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2023, 04:00 PM
Updated : 28 May 2023, 04:00 PM

রংপুরে ভাটা থেকে কম দামে ইট বিক্রির প্রলোভনে শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে, যিনি অন্য একটি মামলায় কারাগারে আছেন। 

রোববার দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ অভিযোগ তুলে ধরেন আমিনুল ইসলাম নামে এক ইটভাটা ব্যবসায়ী। 

এ সময় আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন, যারা বিভিন্নভাবে এই ব্যক্তির প্রতারণার শিকার হন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। 

রংপুর কোতোয়ালি থানার ওসি সুশান্ত কুমার সরকার জানান, মাহফুজার রহমান নামের এই ব্যক্তি রংপুর নগরীর আরাজী তাজহাট এলাকার বাসিন্দা। সিলেটের একটি চেকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি এখন রংপুর কারাগারে আছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালে রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করিণী ইউনিয়নের পালিচড়া গ্রামে একটি ইটভাটা স্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন মাহফুজার রহমান। ইটের ব্যবসায়ের শুরুতে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে মালামাল ক্রয় করেন তিনি। পরবর্তীতে জেলার বিভিন্ন মানুষকে কম দামে ইট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে অগ্রিম টাকা নিতে শুরু করেন। 

আমিনুল বলেন, অগ্রিম অর্থ নেওয়ার সময় আস্থা অর্জনের কৌশল হিসেবে মাহফুজার রহমান ক্রেতাদের কাউকে চেক, কাউকে স্ট্যাম্পে অর্থপ্রাপ্তির অঙ্গীকারনামা, আবার কাউকে ভাটার নামে রশিদ প্রদান করেন। 

এভাবে ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে মাহফুজার রহমান ‘প্রায় ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন’ বলে আমিনুল অভিযোগ করেন। 

ভুক্তভোগী এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, “২০২০ সালে ভাটার মালিকানা শেয়ার বাবদ ২৫ লাখ টাকা দিয়ে আমি তার ভাটা ব্যবসার অংশীদার হই। পরে জানতে পারি তিনি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ইট দেওয়ার কথা বলে অগ্রিম টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।” 

তিনি বলেন, এসব বিষয় জানাজানি হলে মাহফুজার রহমান আত্মগোপনে চলে যান। এমনকি কাউনিয়া উপজেলা প্রশাসনের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য ইট দেওয়ার কথা বলে অগ্রিম ১০ লাখ টাকা নিয়েও মাহফুজার পালিয়ে যান। 

“পরে ওই টাকার সমপরিমাণ ইট আমি তাদের দিয়েছি,” বলেন আমিনুল। 

আমিনুল ইসলাম বলেন, “মাহফুজার অন্যের টাকা গ্রহণ করে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় ভাটায় আমার অংশীদারিত্ব থাকায় তার পাওয়ানাদাররা ইট বা টাকা ফেরতের জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এই ঘটনার পর আমি মাহফুজকে ২০২১ সালে আইনি নোটিশ দেই। পাশপাশি জমির মালিকের জমি ভাড়ার টাকা পরিশোধ করার জন্যও নোটিশ দেই। কিন্তু তাতে তার কোনো সাড়া মেলেনি।” 

পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মাহফুজারের পাওনাদার ও জমির মালিকদের সমন্বয়ে স্থানীয়ভাবে একটি সালিশ বৈঠকের আয়োজন করে ভাটা পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেন বলে আমিনুল জানান। 

আমিনুল বলেন, “২০২১-২২ অর্থবছরের শেষের দিকে পুনরায় ভাটা চালু করে স্থানীয় পাওনাদারদের প্রায় ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে অগ্রিম ইট বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ৯০ লাখ টাকা এবং আমার জমি বিক্রির ২০ লাখ টাকা দিয়ে পুনরায় ইট উৎপাদন শুরু করি।” 

এই ভুক্তভোগী আরও বলেন, “ভাটার কার্যক্রম চালাকালে মাহফুজার আমার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং ভাটা বন্ধে আদালতে ১৪৪ ধারা জারির আবেদন করেন।” 

তিনি বলেন, প্রায় ৭ লাখ কাঁচা ইট যার প্রস্তুত খরচ ৩৫  লাখ টাকা। সেসব এখন নষ্টের উপক্রম হয়েছে। এসব নষ্ট হলে পুরোটাই  ক্ষতি হবে, এই অবস্থায় তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ গাফফারুল ইসলাম অতুল, আজমল হোসেন খান, আসাদুজ্জামান, দুলাল মিয়া, হায়দার আলী, সাদ্দাম হোসেন, জাকির হোসেন লেবু, হারুল মিয়া, শফিকুল ইসলাম, মাহাদ হোসেন পিন্টুসহ অন্যান্য পাওনাদাররা উপস্থিত ছিলেন। 

ওসি সুশান্ত কুমার সরকার জানান, ব্যাংকের চেকের একটি মামলায় সিলেটের একটি আদালত মাহফুজারকে ছয় মাস কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। এই মামলায় তাকে রংপুর পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।