ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎহীন রয়েছেন ৯ হাজার গ্রাহক।
Published : 01 Jun 2024, 09:09 PM
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে দুটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম বিধ্বস্তের খবর পাওয়া গেছে; ঝড়ের কবলে পড়ে দুজন নারী ও জমে থাকা পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে উপজেলার আট থেকে নয় হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন রয়েছেন বলে জানিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
শনিবার ভোরে উপজেলার পাড়িয়া ও বড়বাড়ি ইউনিয়নে ঝড় আঘাত হানে বলে জানিয়েছেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. আফসানা কাওছার।
নিহতরা হলেন- উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের শালডাঙ্গা গ্রামের পইনুল ইসলামের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), একই গ্রামের দবিরুল ইসলামের স্ত্রী জাহেদা বেগম (৫০) এবং একই উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর নয়াপাড়া গ্রামের নাজমুল ইসলামের আড়াই বছরের ছেলে নাঈম।
স্ত্রীকে হারিয়ে শোকে কাতর পইনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঝড়ের সময় আমার স্ত্রী বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। এ সময় বান্দার টিনের ছাউনি খুলে তার ওপর পড়ে। তাকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।”
ঝড়ের সময় বজ্রপাতের বিকট শব্দে নিজ ঘরে স্ট্রোক করে জাহেদা বেগম মারা গেছেন বলে দাবি তার স্বামী দবিরুল ইসলামের।
ঝড় থামার পর উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর নয়াপাড়া গ্রামে বাড়ির পাশের গর্তে জমা বৃষ্টির পানিতে পড়ে শিশু নাঈমের মৃত্যু হয় বলে জানান তার বাবা নাজমুল ইসলাম।
দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, মাত্র ১২ থেকে ১৫ মিনিটের ঝড়ে উপজেলার পাড়িয়া ও বড়বাড়ি ইউনিয়নের তিলকড়া, শালডাঙ্গা, পশ্চিম শালডাঙ্গা, বঙ্গভিটা, লোহাগাড়া, বামুনিয়া, বেলহাড়া, বেলবাড়ী, বটের হাট, হরিপুরসহ প্রায় ২০টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বেশিরভাগ কাঁচা বাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে; ঝড়ে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে ঘরের ওপর।
পশ্চিম শালডাঙ্গা গ্রামের কৃষক নুর ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এতে করে তার দুটি ঘর ভেঙে গেছে। এখন তিনি পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন।
তিলকড়া গ্রামের গৃহবধূ সুমাইয়া আক্তার বলেন, “এর আগে এরকম ঝড় কখনো দেখিনি। ১২ থেকে ১৫ মিনিটের ঝড়ে গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ঝড়ে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে।”
ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, “ঝড়ে ৪০টির বেশি বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে ও ভেঙে গেছে। অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক তারের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্ন হচ্ছে।”
ঝড় থামার পর সকাল থেকে বিদ্যুৎকর্মীরা মাঠে কাজ করছেন; আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান তিনি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল বলেন, “ঝড়ে মরিচ, বোরো ধান, পটোলসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সংগ্রহে মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।”
বালিয়াডাঙ্গী ইউএনও আফছানা কাওছার বলেন, “ক্ষয়ক্ষতি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ঝড়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
ঝড়ের সময় ও পরে মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করে ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য মাজহারুল ইসলাম সুজন বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। দলীয় ও সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে সহযোগিতা করা হবে।”