“মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামির ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে শুনানি বিচারক পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।”
Published : 02 Oct 2024, 10:02 PM
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম মেরাজ হত্যা মামলায় রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি নবী উল্লাহ পান্নাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
বুধবার দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সোয়েবুর রহমান তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে এ মামলার আইনজীবী শেখ মেজবাহুল জানান।
এর আগে ভোররাতে রংপুর নগরীর কলেজ রোডের খামারপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেড় মাস ধরে আত্মগোপনে থাকা পান্নাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা রয়েছে।
আইনজীবী মেজবাহুল বলেন, “গ্রেপ্তারের পর সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা নবী উল্লাহ পান্নাকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই বিজন চন্দ্র আসামির ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
“উভয়পক্ষের শুনানি শেষে মেরাজ হত্যা মামলায় নবী উল্লাহ পান্নার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। রিমান্ড শেষে ৬ অক্টোবর আসামিকে আদালতে হাজির করতে দিন ধার্য করা হয়।”
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চালাকালে ১৯ জুলাই বিকালে সিটি বাজার এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নির্বিচারে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। এ সময় গুলিতে নিহত হন ফল বিক্রেতা মেরাজ। ওই ঘটনায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। ওই মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা নবী উল্লাহ পান্নাকে রিমান্ডে নেওয়া হলো।
মেরাজ নিহতের ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। গত ২৫ অগাস্ট নিহতের স্ত্রী নাজমিম ইসলাম বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর আগে ১৮ অগাস্ট মা আম্বিয়া বেগম বাদী হয়ে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরেকটি হত্যা মামলা করেন। সেখানে আসামি হিসেবে ২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, “১৯ জুলাই সন্ধ্যায় ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ একটি মিছিল সিটি কর্পোরেশনের ফুটওভার ব্রিজের কাছে আসে। এ সময় আসামিরা অস্ত্রে নিয়ে বেআইনিভাবে তাতে বাধা দেয়। মিছিলটি এগিয়ে যেতে থাকলে রংপুর পুলিশ সুপার সতর্ক না করে পুলিশের এপিসিতে উঠে গুলি ও ইটপাটকেল ছোড়ার নির্দেশ দেন। এ সময় আসামিরা তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ও ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে মেরাজুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।”
মেরাজ নগরীর জুম্মাপাড়া এলাকার শামসুল হক ও আম্বিয়া বেগম দম্পতির ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। নগরীর সিটি বাজার এলাকায় ফল বিক্রি করতেন তিনি।
তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথ বলে জানা গেছে, ১৯ জুলাই মেরাজের বিবাহবার্ষিকী ছিল। সেদিন দুপুরে মুরগি, পোলাওয়ের চাল ও আলু নিয়ে বাড়ি যান। বিকালে কলার দোকানের মহাজনকে টাকা দিতে মিরাজুল বাড়ি থেকে সিটি বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। দোকানের কাছাকাছি পৌঁছালে আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার কিছুক্ষণের মধ্যে তার মৃত্যু হয়।