“অ্যাক্সিডেন্টে আমার দুই পা গেছে। এই অবস্থা দেখে সরকার আমারে একটি ঘর দিছে। এখন সুখে আছি।”
Published : 17 Jun 2024, 10:46 AM
“আগে ভিটা বাড়ি কিছুই ছিল না। পরের বাড়িতে থাকতাম। এখন মাথা গোজার ঠাঁই পেয়েছি। তাই এখন নিজের ঘরেই বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে ঈদের আনন্দে করতে পারি।” কথাগুলো বলছিলেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাঘমারা মুজিব পল্লীর রহিমা বেগম।
৩৫ বছর বয়সী এ নারী দুই বছর আগে মুজিব পল্লীতে আশ্রায়ণ প্রকল্পের সেমিপাকা ঘরে ওঠেন। নিজের ঘরের সামনে রহিমা নানা ধরনের শাক-সবজির গাছ লাগিয়েছেন। স্বামী আর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ‘ভালো সময়’ কাটছে তার।
রহিমা বেগমের মতো একই উপজেলার শারীরিক প্রতিবন্ধী দৌলত মিয়া, কাঞ্চন মালা ও মোহাম্মদ মোস্তফাসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়া অনেকে এখন নতুন দিনের স্বপ্ন দেখার সুযোগ পেয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, গত ১১ জুন প্রধানমন্ত্রী জামালগঞ্জ উপজেলায় ৬৬টি ঘর উদ্বোধন করেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন কেউ গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। এ নিয়ে জেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ৪০০ বর্গফুটের সেমিপাকা ঘর পেয়েছেন জেলার ৮ হাজার ৩৩৮ পরিবার। এর মধ্যে কয়েকটি মুজিব পল্লীও রয়েছে। এর বাইরেও প্রায় প্রতিটি গ্রামের ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারও ঘর পেয়েছে।
তিনি বলেন, “এসব পরিবার বসতঘরের পাশাপাশি বিদ্যুৎ চালিত মোটরে গভীর নলকূপের পানি পান ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করতে পারছেন। তাদের বসতঘরের ভেতরেই রয়েছে রান্নাঘর-বাথরুম। ফলে সাচ্ছন্দে এই ঘর ব্যবহার করে এখন সুখ ও শান্তিতেই জীবন কাটাচ্ছেন তারা।
“তারা এই ঘর পাওয়ার আগে যাযাবরের মতো ঘুরেছেন। নিজের কোনো ঠিকানা ছিল না। অনিশ্চিত ছিল সন্তানের পড়ালেখা। সামাজিক, ধর্মীয় উৎসব থেকেও বঞ্চিত থাকতেন। এখন ঈদসহ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবও আনন্দে উদযাপন করতে পারেন তারা।“
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চানপুর গ্রামের কাঞ্চনমালা বিবি বলেন, “আগে মানুষের বাড়িত থাকতাম। মাইষের বাড়িতই পুরি বেটি বুড়ি অইছি। ছয়লা-ফুরুতা লইয়া বড় বিফদে আছলাম। আগে থাকবার জায়গা আছিল না। ঈদের আনন্দ চোখে দেখছি না।"
“এখন ঘর পাইয়া আনন্দে আছি। আল্লায় আমরারে শেখ হাসিনার উছিলায় সুখে শান্তিতে রাখছইন।"
মাঝাইর মুজিব পল্লীর বাসিন্দা প্রতিবন্ধী দৌলত মিয়া বলেন, “ঘর পাইবার আগে আমার কোনো জাগাবাসা আছিল না। মাইনষের বাড়িঘরে থাকতাম।
“অ্যাক্সিডেন্টে আমার দুই পা গেছে। এই অবস্থা দেখে সরকার আমারে একটি ঘর দিছে। প্রতিবন্ধী ভাতাও দিচ্ছে। এখন বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সুখে আছি।”
একই গ্রামের মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, “সরকারি ঘর পাইয়া আমরা অনেক খুশি। পাঁচ বালবাচ্চা লইয়া কষ্টে আছলাম। এখন ঘর পাইছি; শান্তিতে আছি। ঈদও নিজের ঘরে করতাম পারি।”
আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ঘর পাওয়া লোকদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে এবং তারা প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন বলে জানালেন জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল।
তিনি বলেন, “আশ্রায়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের বিনাসুদে ঋণও দেওয়া হয়েছে। পুনর্বাসিত লোকজন একক গৃহে সপরিবারে অবস্থান করছেন।”
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ও তার সরকার চায় না, তার নাগরিকদের গৃহহীন ও ভূমিহীন রেখে উন্নয়ন অভিযাত্রার দিকে যেতে। তাই যারা ভাসমান ভূমিহীন গৃহহীন ছিল তাদের তিনি পাকা ঘর দিয়েছেন।
“গৃহহীনরা নিজের ঘর, আঙ্গিনা ও উন্নত শয়নকক্ষ পেয়ে খুশি। ঈদের দিনে তাই তাদের মধ্যে আনন্দের সঙ্গে স্বস্তিও বিরাজ করছে।”
তিনি বলেন, “রাষ্ট্র ও সরকার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে দারিদ্র বিমোচনের জন্য। তাই সমাজের বিত্তবান যারা বিভিন্ন সময়ে সহায়তা করেন তাদের অনুরোধ জানাচ্ছি, দানের ক্ষেত্রে তারা যেনো এসব মানুষদের বাছাই করেন।”