সকাল থেকেই গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুরে তিস্তা ব্রিজ এলাকায় মানুষের ঢল নামে।
Published : 18 Feb 2025, 09:32 PM
‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ এ শ্লোগানে উত্তরের পাঁচ জেলায় চলছে ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রাত ৮টার দিকে শুরু আলোচনা সভা চলামান আছে। রাত ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচি শেষ হবে।
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে নদীপাড়ে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির শেষ দিন মঙ্গলবার।
দ্বিতীয় দিনে গাইবান্ধায় আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে। সকাল থেকেই গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর তিস্তা ব্রিজ এলাকায় মানুষের ঢল নামে।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে কৃষক, জেলে, মাঝি, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।
সকালে গান, পথনাটক ও কবিতার মাধ্যমে তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরা হয়।
“তিস্তা শুধু নদী নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের অংশ। এই নদী হারালে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।”
তিস্তা বাঁচানোর এ বার্তা ভাওয়াইয়া, পালা গান ও লোকসংগীতের সুরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
সংগীতের শক্তিকে আন্দোলনের ভাষা হিসেবে বেছে নেওয়ার বিষয়ে আন্দোলনকারীরা বলেন, সংগীত শুধু বিনোদন নয়, এটি প্রতিবাদের শক্তিশালী মাধ্যমও বটে। আমরা গানের মাধ্যমে তিস্তা পাড়ের দুঃখ-কষ্ট, বঞ্চনার কথা তুলে ধরছি, যেন সবার হৃদয়ে নাড়া দেয়।”
এছাড়া গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হা-ডু-ডু, ঘুড়ি উড়ানো, গোল্লাছুট ও দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
বিকাল ৫টার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিস্তাপাড়ের মানুষের প্রতি সংহতি জানান।
তিনি বলেন, “এতদিন তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সরকার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। উত্তরবঙ্গের কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এই নদীর সঙ্গে জড়িত, অথচ সরকার নীরব ভূমিকা পালন করছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।”
কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া স্থানীয় কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, “তিস্তার সংকট শুধু নদীর সংকট নয়, বরং কৃষি, জীবন-জীবিকা, পরিবেশ ও অর্থনীতির সংকট।”
তিনি বলেন, “তিস্তার সংকটের কারণে কৃষকরা প্রতিনিয়ত ক্ষতির মুখে পড়ছেন, অথচ কোনো স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে কৃষি আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।”
জেলে রমিজ উদ্দিন বলেন, “তিস্তাত পানি না থাকায় মাছ ধরবার সুযোগ কমি গ্যাছে। নদী যখন শুকি যায়, তখন মাছ পাই না। তাই হামরঘোরের অনেকে অন্য পেশাত গেতে বাধ্য হচে। সোরকারের উচিত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়া।”
সুন্দরগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী লিপি আকতার বলেন, “আমরা যারা শিক্ষার্থী, তাদের ভবিষ্যৎও এই নদীর ওপর নির্ভরশীল। তিস্তা ধ্বংস হলে আমাদের গ্রামগুলোও হারিয়ে যাবে। আজ আমরা মশাল জ্বালিয়ে সরকারকে বলতে চাই, আর দেরি নয়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করুন।”
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহমুদুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, “তিস্তা শুধু আমাদের জীবন-জীবিকার উৎস নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের অংশ। আমরা চাই, সরকার দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুক, নইলে এই আন্দোলন আরও বেগবান হবে।”
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলা সমন্বয়ক মইনুল হাসান সাদিক বলেন, “ভারত একতরফাভাবে তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করছে, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা শুকিয়ে যায়, বর্ষায় ভয়াবহ বন্যায় তিস্তাপাড়ের মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অথচ সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা মনে করি, তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন ছাড়া এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে তারা আরও বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেবেন। অবস্থান কর্মসূচির শেষ সময়েও হাজারো মানুষের সরব উপস্থিতি জানিয়ে দিয়েছে তিস্তা বাঁচানোর এই আন্দোলন থেমে থাকবে না।”
সোমবার সকালে উত্তরের পাঁচ জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী ও গাইবান্ধার তিস্তাপাড়ের ১১টি পয়েন্টে দুই দিনের এ অবস্থান কর্মসূচি হয়।
তিস্তাপাড়ের কৃষক, জেলে, মাঝি, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নিয়েছেন নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে।
আয়োজকদের দাবি, সরকারের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ, যাতে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা যায়।