আগামী সপ্তাহে কোম্পানির এমডি ও শ্রমিকদের সঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক।
Published : 27 Sep 2024, 05:14 PM
শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে নাটোরে প্রাণ অ্যাগ্রোর কারখানার উৎপাদনসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সদর উপজেলার একডালা এলাকায় প্রাণ অ্যাগ্রোর কারখানায় বেতন বৃদ্ধি ও বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলে।
পরে প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) শামীম রেজা বলেন, “দাবির বিষয়ে কোম্পানির এমডির (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) সঙ্গে শ্রমিকদের ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবের আলোচনায় বসার কথা আছে। তাই আগামী ১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) পর্যন্ত কোম্পানির সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।”
নাটোরের একডালায় প্রাণ কোম্পানির কারখানাটিতে পাঁচ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন। গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ দফা দাবিতে প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেডের শ্রমিক-কর্মচারীরা কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- বেতন বৃদ্ধি, নাইট বোনাস, আহত শ্রমিকদের শতভাগ চিকিৎসা, ইচ্ছেমতো শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা, যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি, শ্রমিক মারা গেলে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা তখন অভিযোগ করেন, বছরের পর বছর ধরে তারা নামমাত্র বেতনে প্রাণ কোম্পানিতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। তারা তাদের ন্যায্য বেতন পান না। অনেক সময় কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করেও কোনো সমাধান হয়নি। এ ছাড়া কোম্পানিটির কর্মকর্তারা ইচ্ছেমতো শ্রমিক ছাঁটাই করেন।
পরে তাদের দাবির মধ্যে বেশ কয়েকটি দাবি মানার কথা বললেও, মূল দাবি বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো কথা বলেনি, তাই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শ্রমিকরা।
এ অবস্থায় শ্রমিকেরা কাজ করতে না চাওয়ায় তখন দুই দিনের জন্য কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রাণ কর্তৃপক্ষ।
এরপর ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে আবার কাজে যোগ দেন শ্রমিকেরা।
সে সময় প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেডের নাটোরের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) শামীম রেজা বলেছিলেন, আন্দোলনকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ‘অযৌক্তিক’ দাবি রয়েছে। কিছু দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আগের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শ্রমিকদের সব দাবি-দাওয়া মেনে না নেওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা প্রাণ অ্যাগ্রোর নাটোরের জেনারেল ম্যানেজার (ফ্যাক্টরি) হযরত আলীকে কারখানার বাইরে বের হতে দেননি।
মিতা খাতুন নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, “প্রাণ কোম্পানি আমাদের কথা দিয়েও সেই কথা রাখেনি। তারা বলেছিল ২৫ তারিখের মধ্যে আমাদের সব দাবি মেনে নেবে।
“কিন্তু আমাদের প্রধান দাবি বেতন বৃদ্ধি (সর্বনিম্ন ১২ হাজার টাকা) তারা মেনে নেয়নি। আমরা আমাদের দাবির কথা তুললেই তারা বলে কোম্পানি বন্ধ করে দেবে।”
শ্রমিকদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সেনাবাহিনী বিপুল সংখ্যক সদস্য প্রাণের কারখানার ভেতরে অবস্থান নেন।
খবর পেয়ে নাটোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. মাছুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার মারুফাত হোসাইন কারখানায় আসেন। তারা দীর্ঘ সময় কোম্পানির শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন।
এরপর সন্ধ্যার পরে অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া নিয়ে কোম্পানির এমডির সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসসহ সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এরপর শ্রমিকরা বিক্ষোভ বন্ধ করলে রাত ৮টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা জেনারেল ম্যানেজার হযরত আলীকে উদ্ধার করে কারখানার বাইরে নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে নাটোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মাছুদুর রহমান বলেন, “খবর পেয়ে কারখানায় গিয়ে শ্রমিক এবং প্রাণ কোম্পানির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে জেনারেল ম্যানেজারকে (ফ্যাক্টরি) প্রত্যাহার করেছে প্রাণ কর্তৃপক্ষ।”
শ্রমিকদের প্রধান দাবি, বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে আগামী সপ্তাহে কোম্পানির এমডি ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব। এ সময়ের মধ্যে প্রাণ অ্যাগ্রোর সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে প্রাণ কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিকেরা বিক্ষোভ বন্ধ করায় প্রাণ কোম্পানির কারখানা এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক।