পদ্মা সেতুতে ওঠা বন্ধ, ফেরিও নেই; বিপাকে বাইকাররা

পদ্মা সেতুতে মোটর সাইকেলের ওঠা বন্ধ করে দেওয়ার পর ফেরিও না পেয়ে বড় ভোগান্তিতে পড়েছেন বাইকাররা।

শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2022, 07:08 PM
Updated : 28 June 2022, 08:33 AM

সোমবার দিনের শুরুতে কেউ কেউ সেতুর উপর দিয়ে পিকআপভ্যানে বাইক পারপার চললেও পরে সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এরপর পদ্মা পাড়ি দিতে দীর্ঘ পথ ঘুরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া কিংবা শরীয়তপুর-চাঁদপুরের ফেরি ধরা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না বাইকারদের।

যা নিয়ে ক্ষোভ দেখা গেছে মোটর সাইকেল চালকদের মধ্যে। তাদের কেউ কেউ ফেইসবুকে লিখেছেন- ‘এখন যদি বাস এক্সিডেন্ট করে তাহলে কি বাস সেতুতে উঠায় নিষেধাজ্ঞা আসবে?’

শনিবার উদ্বোধনের পর রোববার সকাল ৬টায় খুলে দেওয়া হয় বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু। ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুতে উঠতে ভোরেই শুরু হয় লাইন।

সেতুতে ওঠার এই মিছিলে সংখ্যায় সব চেয়ে বেশি ছিল মোটর সাইকেল। ১০০ টাকা টোল দিয়ে সেতুতে উঠে বাইকারদের অনেকেই নিয়ম না মেনে হুল্লোড়ে মাতেন।

সন্ধ্যায় সেতুতে মোটর সাইকেলে চড়ে মোবাইলে ভিডিও করার সময় দুর্ঘটনায় পড়ে প্রাণ যায় দুই তরুণের। তারপর সেতুতে মোটরসাইকেল ওঠা নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয় সেতু বিভাগ।

কিন্তু সোমবার সকালেও অনেক মোটর সাইকেল সেতুতে উঠতে আসে। কিন্তু টোল প্লাজার আগে তাদের আটকে দেওয়া হয়।

মোটর সাইকেল উঠতে গেলেই বাধা।

তখন বিকল্প হিসেবে পিকআপভ্যানে নিজের বাইক তুলে পার করার বুদ্ধি করেন কেউ কেউ। দুপুরের আগে মাওয়ায় পিকআপে ৭/৮টি করে মোটরসাইকেল সেতু পাড়ি দিতে দেখা গেলেও দুপুরে তা বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পিকআপে বাইক পার হচ্ছে, এমন কোনো দৃশ্য আমাদের চোখে পড়েনি। দেখলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে মোটর সাইকেলবাহী পিকআপ চলাচল বন্ধের জন্য কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানান পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোববার রাতেই পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে মোটরসাইকেল ও যাত্রীবাহী পিকআপ চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই মোতাবেকই কাজ করছে পুলিশ।”

পিকআপভ্যানে বাইক তোলার পর নিজের বাহনের নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক বাইকার পিকআপেই চেপেছিলেন। ফলে যাত্রীবাহী হিসেবে সেগুলো আটকে যায়।

বাইক পিকআপে তুলে পদ্মা সেতু পারাপার।

এই পরিস্থিতিতে আগে যেভাবে ফেরিতে পার হতেন, সেই পথ খোঁজেন বাইকাররা।

জাজিরা প্রান্তে শত শত মোটরসাইকেল জড়ো হলেও সকালে একটি মাত্র ফেরি শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছাড়ে, কিন্তু সেটাও আটকে যায় ডুবোচরে।

চার ঘণ্টা বাদে ফেরিটি উদ্ধারের পর তা মাঝিরঘাটে ভেড়ে বলে জানান বিআইডব্লিউটিসির এই ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ।

এরপর আর কোনো ফেরি না চলায় বাইকারদের খুঁজতে হয় অন্য বিকল্প।

মাওয়া প্রান্তে গিয়ে ফেরি বা সেতুতে উঠতে না পেরে ঢাকার দিকে ফিরতে হয়েছে অসংখ্য বাইকারকে।

পদ্মায় এভাবে ফেরিতে পার হতেন বাইকাররা। ফাইল ছবি

অন্যদিকে জাজিরা প্রান্তে আটকে পড়া কেউ কেউ ৯০ কিলোমিটারের বেশি দূরের দৌলতদিয়া ঘাটের পথ ধরেন। সেখানে ফেরিতে পদ্মা পেরিয়ে পাটুরিয়া ঘাট হয়ে মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকা আসা যাচ্ছে।

কেউ কেউ আবার যান ৬০ কিলোমিটার দূরের নরসিংহপুরঘাটে, সরু পথে। সেখানে ফেরিতে উঠে মেঘনা পেরিয়ে চাঁদপুর ঘাটে নেমে কুমিল্লা হয়ে ঢাকা যাওয়ার সুযোগ থাকলেও তাতে

অন্তত একশ কিলোমিটার পথ বেশি পাড়ি দিতে হবে।

তবে মুন্সীগঞ্জ থেকে শরীয়তপুর বা মাদারীপুরে এতদিন যারা মোটর সাইকেলে যাতায়াত করতেন, তাদের জন্য সহজ কোনো বিকল্পই এখন আর নেই।