১৫ জুনের নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের হাতে প্রচার চালানোর জন্য সময় আছে আর ১২ দিন। মেয়র, কাউন্সিলর আর সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর মিলে ১০৬ জন প্রার্থী সমানতালে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন নগরীর ২৭ ওয়ার্ডে। যেন একটু সময় ফুরসত নেই।
অধিকাংশ ভোটারই জানাচ্ছেন, প্রার্থীরা আসছেন ভোট চাইতে আর ভাল নাগরিক সুবিধার প্রতিশ্রুতি নিয়ে। ভোটের এই উৎসবমুখর পরিবেশ যেন প্রচারের শেষ দিন পর্যন্ত বজায় থাকে এটাই তাদের কামনা।
মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন পাঁচজন। তারা প্রতিদিন ভোটারদের কাছে যাওয়া ছাড়াও উঠান বৈঠক, পথসভায় অংশ নিচ্ছেন। এর বাইরে ভোটকেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট নিয়োগসহ প্রচারের নানা বিষয়াদি দেখভাল করতে হচ্ছে তাদেরকে। এরই মধ্যে ব্যানার ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী।
মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর কান্দিরপাড়, রাজগঞ্জ, মনোহরপুরসহ কয়েকটি স্থানে গণসংযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। এ ছাড়া দক্ষিণ চর্থা, কাশারিপট্টিসহ আটটি স্থানে পথসভায় অংশ নিয়েছেন।
“ভোরে ঘুম থেকে উঠে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলি। এরপর শিডিউল অনুযায়ী গণসংযোগে বা পথসভায় বের হয়ে পড়ি। গণসংযোগে মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমি নির্বাচিত হয়ে মানুষের সেবক হতে চাই। দুর্নীতিমুক্ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গড়তে চাই।”
স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু টানা দুইবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। দুবারই তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়েছেন। একবার বিএনপির হয়ে, একবার স্বতন্ত্রভাবে।
সাক্কু মঙ্গলবার দিনভর নগরীর ঝাউতলা, বাদুরতলা, বাগিচাগাঁও, কান্দিরপাড় এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। এ ছাড়া বাদুরতলা ও বাগিচাগাঁও এলাকায় দুটি উঠোন বৈঠক করেছেন তিনি।
“গণসংযোগের সময় মানুষ আমাকে দেখলে উৎসাহ দেয়। তারা আমাকে আবারও নির্বাচিত করবে বলে আশ্বাস দিচ্ছে। আমি এবার নির্বাচন করছি অসম্পূর্ণ কাজগুলো শেষ করার জন্য। আশা করছি, মানুষ আমাকে হতাশ করবে না।”
বিগত দুটি নির্বাচনে সাক্কুর প্রতিদ্বন্দ্বীরা ছিলেন ভিন্ন দলের। কিন্তু এবার তার নিজ দলের ‘নেতা’ নিজাম উদ্দিন কায়সারও ভোটের মাঠে রয়েছেন।
কায়সার বলেন, “প্রচারে মানুষের বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠি। ঘরে নাস্তা করা হয় না। পথে কোথাও বসে পড়ি। রাতে ঘুমাতে গেলে ফজরের আজান কানে আসে। ক্লান্তি ভর করে। তবে কিছু করার নেই। এখন আসলে ঘুমানোর সময় নেই।“
এ ছাড়া মেয়র পদে নির্বাচনে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম; যিনি ‘হাতপাখা’ প্রতীকে লড়ছেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুলের মার্কা ‘হরিণ’।
‘দুর্নীতির শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করবেন রিফাত
নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনে দুর্নীতির একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। প্রচারে ও পথসভায় ভোটারদের তিনি এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
সাবেক মেয়রের উদ্দেশে রিফাত বলেন, “তিনি (সাক্কু) ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে কুমিল্লা পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘ এই সময়ে তিনি নগরীর মানুষের জন্য কী করেছেন, তা নগরীর প্রতিটি মানুষের কাছে দৃশ্যমান। তিনি এত উন্নয়ন করেছেন যে, আধা ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই নগরী পানির নিচে ডুবে যায়। যানজটের কারণে নগরীর মানুষ এখন দিশেহারা।“
এদিকে, সোমবার থেকে রিফাতের ১১ দফা সম্বলিত একটি প্রচারপত্র ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তার সমর্থকরা।
১১ দফায় রয়েছে- সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করা, ভবনের নকশা অনুমোদনে সরকারি ফির বাইরে মেয়রকে এক টাকাও ঘুষ না নেওয়া, বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদনে মেয়রকে বিনামূল্যে কোনো ফ্ল্যাট দিতে হবে না, ঠিকাদার কার্যাদেশ নিতে মেয়রকে পারসেনটেজ হিসেবে ঘুষ দিতে হবে না, সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে দলীয় কার্যালয় না বানিয়ে কুমিল্লা গণমানুষের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হবে, কুমিল্লার দীর্ঘদিনের সদস্যা জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন করা হবে, করের টাকা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হবে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সব পর্যায়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে, কুমিল্লার মানুষের জন্য মেয়রের দরজা সবসময় খোলা থাকবে এবং কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নসহ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং ও মাদকমুক্ত শান্তির কুমিল্লা গড়তে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের হাতকে শক্তিশালী করা।
অভিযোগ ‘হাস্যকর’ বললেন সাক্কু
রিফাতের অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলেছেন সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু।
“এগুলো বলে কুমিল্লার মানুষকে আমার কাছ থেকে বিমুখ করা যাবে না। মানুষ আমার পাশে আছে, আমিও তাদের পাশে আছি।”
মেয়র পদের অন্য দুই প্রার্থী হলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম; তিনি ‘হাতপাখা’ প্রতীকে লড়ছেন। এ ছাড়া হরিণ প্রতীকে লড়ছেন কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল।
আরও পড়ুন