ফেনীর মাল্টার বাগানগুলোতে চলতি বছর ‘ভাল ফলন’ হয়েছে। এতে জেলার অনেক চাষি এখন মালটা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
Published : 18 Sep 2021, 12:15 PM
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ সফি উদ্দিন জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি-১) জাতের মাল্টার উদ্ভাবক। তিন বছরের মাথায় ফেনীর মাল্টা বাগানগুলোতে ব্যাপক ফলন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাল্টা চাষিদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ফেনীতে ২০১৫ সাল থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাল্টা চাষ শুরু হলেও ২০১৮ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু হয়েছে। জেলার সমুদ্র উপকূলীয় সোনাগাজী উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকায় চলতি বছর মাল্টার চাষ হয়েছে। এছাড়া ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়ও মাল্টার চাষ হচ্ছে।
জেলার চলতি বছর ২৩ দশমিক ৮০ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। আবহাওয়া মাল্টা চাষের উপযোগী হওয়ায় দিন দিন ফলনও ভাল হচ্ছে।
মাল্টা চাষি সোনাগাজী উপজেলার উত্তর চরসাহাভীকারী গ্রামের মোশাররফ হোসেন জানান, জীবিকার তাগিদে তিনি ১৯৯৮ সালে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে বেশ ভাল বেতনে চাকরি করতেন। ২০ বছর প্রবাস জীবন শেষে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে ফিরে আসেন।
দেশে বেকার থাকা অবস্থায় ইউটিউবে উত্তরাঞ্চলের একজন সফল মাল্টা চাষির বেড়ে ওঠার সংবাদ দেখে তিনি উৎসাহিত হন। এরপর মাল্টা চাষের সফলতার কয়েকটি ভিডিও দেখে তিনি এলাকায় মাল্টা চাষ শুরু করেন।
২০১৮ সালের জুন মাসে ছোট ভাই ইমাম হোসেনকে নিয়ে ৪০ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে নিজের সাড়ে চার একর জমিতে ২ হাজার ২০০টি গাছ দিয়ে মাল্টার বাগান শুরু মোশারফ।
তিনি বলেন, “চলতি বছর তার বাগান থেকে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে প্রায় দুই হাজার কেজি মাল্টা বিক্রি হয়েছে। এই বাগানে আরও প্রায় ৮০০-১০০০ কেজি মাল্টা বিক্রি করা যাবে। মাত্র তিন বছরেই তিনি ‘সফল’ মাল্টা চাষি হয়েছেন।”
মোশারফের বাগানে বারি মাল্টা-১ (পয়সা মাল্টা) জাতের মাল্টা গাছ রয়েছে। এ জাতের মাল্টা চারা রোপণের দুই বছরের মধ্যে ফলন শুরু হয়। চলতি বছর প্রথমে গাছ প্রতি ৫০-৮০টির বেশি মাল্টা ধরেছে। এ বছর পাইকারী ও খুচরা ভাবে প্রায় তিন লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন।
বর্তমানে তার বাগান পরিচর্যার জন্য ১০ জন লোক কাজ করেন।
মোশারফ জানান, তার দেখাদেখি এলাকার অনেক বেকার যুবক মাল্টাবাগান করে বেকারত্ব দূর করছেন। মনোরম পরিবেশ হওয়ায় প্রতিদিন বিকেলে শতশত মানুষ মাল্টা বাগানে বেড়াতে আসেন।
তবে মাল্টা চাষে সোনাগাজী উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিনি কোন ধরনের সহায়তা পাননি বলে জানান।
এ বিষয়ে সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, সোনাগাজী উপজেলা সদর থেকে অনেক দুরে ও নদীর ওপারে হওয়ায় যাতায়তে সমস্যা হয়। এ জন্য নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের কৃষি বিভাগ মোশারফকে মাল্টা চাষে সর্বাত্মক সহযোগীতা করছেন।
“মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখানে উৎপাদিত মাল্টার স্বাদ মিষ্টি।”
সোনাগাজীর চর দরবেশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম ভুট্টু বলেন, মোশারফের বাগানে উৎপাদিত মাল্টা আকারে বড় ও মিষ্টি। সরকারি কোন সাহায্য ছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাড়ে ছয় একরের মাল্টা ও গাছের বাগান করায় চাষি মোশারফ প্রশংসা দাবি রাখে।
সোনাগাজীর মোশাররফের মতো মাল্টা বাগান করেছেন জেলার পরশুরাম উপজেলার নিজকালিকাপুর গ্রামের আরাফাত হোসেন চৌধুরী, মহিউদ্দিন চৌধুরী, ফুলগাজী উপজেলার জিএমহাট ইউনিয়নের বসিকপুর গ্রামের মাল্টা চাষি হারুন উর রশিদসহ আরও অনেকে।
চাষি হারুন উর রশিদ বলেন, অকৃষি সমতলভূমিতে চাষের লক্ষ্যে তিন বছর বছর আগে ফুলগাজীর কৃষকদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বারি-১ জাতের মাল্টার চারা দেয়। তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে ১০ শতক জমিতে ৫০টি মাল্টার চারা রোপণ করেন।
“তিন বছরে চারাগুলো উচ্চতায় ১৫ থেকে ২০ ফুট হয়েছে। ফলে ছেয়ে গেছে গাছ। এ বছর প্রতিটি গাছে ৮০ থেকে ৯০টি মাল্টা ধরেছে। প্রতিটি মাল্টাই আকারে বড়, রসালো, খেতে মিষ্টি।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ একেএম মনিরুল আলম বলেন, বারি-১ জাতের মাল্টা সুস্বাদু। পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন লাল এবং দোআঁশ মাটি এ জাতের মাল্টা চাষের উপযোগী।
এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, আকারে অনেক বড়। তাই দেশি মাল্টার কদর বেশি।