উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় প্রথম দফায় ১০টি বাস রওনা হয়। পরে বেলা পৌনে ১টার দিকে ১০টি এবং বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আরও পাঁচটি বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়।
রোহিঙ্গাদের বহনকারী বাসগুলোর সামনে ও পেছনে র্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে শুধু নিরাপত্তার দায়িত্বটুকু আমরা পালন করছি। বাকি বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।”
স্থানীয়রা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য বুধবার রাতেই উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। রাতেই উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো করা হয় কয়েক ডজন বাস।
স্থানীয় মুদি দোকানি আবুল কালাম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে দুই দফায় ২০টি বাসকে তিনি ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে দেখেছেন।
উখিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক শফিক আজাদ বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পাঁচটি বাস উখিয়া থেকে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাস এলাকাজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। সেখানে সাধারণ মানুষের চলাচলেও বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু দ্দৌজা গত ২৯ নভেম্বর বলেছিলেন, “আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে রোহিঙ্গাদের একটি দলটি ভাসান চরে স্থানান্তরের যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে।”
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে আগেই ভাসানচরে নিয়ে রাখা হয়েছিল।
এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলকে দেখার জন্য ভাসান চরে পাঠানো হয়।
তারা ফেরার পর তাদের কথা শুনে রোহিঙ্গাদের একাংশ ভাসান চরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে বলে জানানো হয় সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।
তবে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সরকারের এই উদ্যোগ থেকে দূরত্ব রেখে চলেছে।
ভাসান চরে যাওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা যেন সব তথ্য জেনে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তা নিশ্চিত করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।
সেখানে বলা হয়, “এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ার প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে, অথবা শরণার্থীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।”
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচও (এইচআরডব্লিউ) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে রয়টার্স লিখেছে, অনাগ্রহী রোহিঙ্গাদেরও ভাসানচরে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।
দুজন রোহিঙ্গার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের সম্মতি না নিয়েই তাদের নাম স্থানান্তরের তালিকা ওঠানো হয়েছে।
ভাসানচরে যেতে সরকারি কর্মকর্তারা হুমকিসহ নানা প্রলোভন দেখাচ্ছেন বলেও সাহায্য সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছে রয়টার্স।
আরও পড়ুন