রোহিঙ্গা প্রশ্নে ‘বন্ধু দেশগুলোর’ ভূমিকায় হতাশা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বললেও কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2020, 08:15 PM
Updated : 30 Oct 2020, 05:01 AM

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সবাই বলে, কিন্তু একটা লোকওতো এখনও যায় না। তিন বছর পার হয়ে গেছে একজনও যায়নি।

“যদিও মিয়ানমার দাবি করে, কিছু কিছু লোক নাকি একলা একলা চলে গেছে মিয়ামনারে।”

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

গত বছর দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।

প্রত্যাবাসনের পক্ষে সব দেশ নিজেদের অবস্থান জানান দিলেও এক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “অনেকের ক্ষেত্রে শুধু বক্তব্য শুনি, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে উল্টো কাজ হয়। যেমন জাপানের রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে ওই দিন দেখা করে বললেন যে, তারা এক পায়ে দাঁড়িয়ে আমাদের সাহায্য করবেন তাদের রিপার্ট্রিয়েশনের জন্য। এ নিয়ে আমাদের বলেন, কিন্তু…

“তারা কিন্তু ইন আ ভেরি গুড পজিশন। কারণ তাদের সাথে মিয়ানমার সরকারের ভালো সম্পর্ক। মিয়ানমারে তাদের বিনিয়োগ প্রচুর। গত কয়েক বছরে অনেক গুণ বেড়েছে। সুতরাং তাদের কথা মিয়ানমার শুনবে।”

মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলাপ করতে জাপানের প্রতি আহ্বান জানানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তারা বলেছে, আমরা প্রত্যাবাসন চাই। আমরা বলেছি, আমাদের এক নম্বর ইস্যু হচ্ছে প্রত্যাবাসন, তারা তাদের স্বদেশে মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে এবং নিরাপদে ফিরে যাবে।

“তারা এটা স্বীকার করেছেন। কিন্তু কেউ জোর দেন না। এটা একটা সমস্যা। আমরা ইদানিং সবাইকে জোরেশোরে বলছি, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মিয়ানমারের বন্ধুপ্রতীম দেশ চীনের ভূমিকা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “চায়না, যাদেরকে আমরা আশা করেছিলাম সার্ভিসটা দেবে, তাদের প্রভাব মিয়ানমারে যথেষ্ট আছে।

“তারাও বলছে যে, তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের আলাপ হয়েছে, তারা (মিয়ানমার) বারবার বলছে নিয়ে যাবে, যাচাই-বাছাইয়ের পরে।”

প্রত্যাবাসন প্রশ্নে জার্মানির মতো কয়েকটি দেশের একাট্টা হওয়ার কথা তুলে ধরে মোমেন বলেন, “জার্মানি বিনিয়োগ স্থগিত করেছে। বলেছে যে, প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত এগুলো বন্ধ থাকবে।”

রোহিঙ্গাদের ফেরানোর উদ্যোগ না নিয়ে মিয়ানমারের উন্নয়ন সহযোগী হওয়ায় ইঙ্গিতে চীনের সমালোচনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা তাদের ঝগড়াঝাঁটি। আমাদের একমাত্র লক্ষ হচ্ছে- যত তাড়াতাড়ি এ লোকগুলো যাবে আমাদের জন্য মঙ্গল, মিয়ানমারের জন্য মঙ্গল, সারা এলাকার জন্য মঙ্গল।

“দেখেন এরা অনেক দিন এখানে আছে। এদের কোনো কাজকর্ম নাই, সুতরাং এটা বিভিন্ন রকম অসামাজিক কাজে ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। ড্রাগের জন্য ঝগড়াঝাটি করে আটজন সেদিন মারা গেছে। উগ্রবাদ ছড়াতে পারে। কারণ বিভিন্ন গ্রুপ এদেরকে ব্যবহার করছে। এজন্য আমরা চাই, যত তাড়াতাড়ি তারা স্বদেশে ফেরত যাক।”

ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নত করতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বক্তব্য প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, “বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলে তাদের জীবনমান উন্নত করতে হবে। এগুলো তাদের নিজের দেশে গিয়ে করুক। এখানে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আছে, তার মধ্যে থাকুক। আমরা এখানে জীবনমানের উন্নয়নের জন্য এসব উদ্যোগ নিইনি।”

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার আপত্তির মুখে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে ফেরানোর সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বাংলাদেশ সরকার। নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের আরেকটি দলকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ও আলোচনায় রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “আমরা পর্যায়ক্রমে কিছু কিছু লোক নিয়ে যাচ্ছি। তারা গিয়ে ওখানে দেখবে, যারাই এ পর্যন্ত দেখছে সবারই পছন্দ হয়েছে। ভাসানচরে তাদের থাকা-খাওয়া অনেক উন্নতমানের হবে।”

পরবর্তী দলকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারসহ (আরআরআরসি) অন্যান্য সংস্থা দিনক্ষণ ঠিক করবে।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের যুক্তি তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কুতুপালংয়ে যেখানে আছে সেখানে যে কোনো সময় ভূমিধস হতে পারে, সেখানে এখন অতিবৃষ্টি হয়, তার ফলে ভূমিধস হলে অনেকে মারা যাবে।

“আর মারা গেলে আপনারা সবাই আমাদের উপর দোষ দেবেন যে, আমরা তাদেরকে ঠিকমতো প্রটেকশনটা দিই নাই, সেজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নিয়ে যাব। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে এখনো অটল আছি।”