মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধে এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় সর্বোচ্চ আদালত বহাল রাখায় খুশি রংপুরের মানুষ। এখন তাদের চাওয়া, দ্রুতই যেন তার সাজা কার্যকর করা হয়।
Published : 31 Oct 2019, 12:21 PM
একাত্তরে আলবদর বাহিনীর রংপুরের কমান্ডার আজহারের ত্রাসের রাজত্ব ছিল দিনাজপুর জেলার পার্বতিপুর থেকে রংপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায়।
সে সময় তার নেতৃত্বেই বৃহত্তর রংপুরে গণহত্যা চালিয়ে ১৪ শ’র বেশি মানুষকে হত্যা, বহু নারীকে ধর্ষণ ও অপহরণ, নির্যাতনের তিন অভিযোগে পাঁচ বছর আগে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল অঅজহারকে মৃত্যুদণ্ড এবং দুই অভিযোগে মোট ৩০ বছরের করাদণ্ড দিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের রায়ে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা ও হত্যার তিন ঘটনায় তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে।
অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের আরেকটি ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের দেওয়া পাঁচ বছরের সাজাও বহাল রাখা হয়।
আর বহু নারীকে রংপুর টাউন হলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্রে ধর্ষণের জন্য তুলে দেওয়ায় ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের রায়ে আজহারের ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হলেও এ অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছে আপিল বিভাগ।
কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও পিপি আব্দুল মালেক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এটিএম আজহারুল দিনাজপুরের পার্বতিপুরসহ রংপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরীহ মানুষদের ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। আজহারুল ছিল এই এলাকার মূর্তিমান আতংক।
“তার সহাতায় পাক সেনারা বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মেয়েদের ধরে এনে রংপুর টাউন হলে নির্যাতনের হত্যা করে সেখানকার একটি কুয়ায় ফেলে রাখত।”
একাত্তরে আজহারুলের নির্যাতনের শিকার হয়েছিল জাসদ (ইনু) রংপুর জেলা সভাপতি সাখাওয়াত রাঙ্গার পরিবার।
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “আমার তার বড় ভাই রফিকুল ইসলাম নান্নু সে সময় আওয়ামী ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। তাকে বেতপট্টি এলাকা থেকে তুলে রংপুর কলেজের একটি ছাত্রাবাসে নিয়ে বেশ কয়েকদিন আটকে রেখে নির্যাতন করে আজহার।
“নির্যাতনে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে সেখানে ফেলে রেখে যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। এরপর প্রায় দেড় বছর চিকিৎসার পর সুস্থ হন আমার ভাইা।”
আজহারের নির্যাতনে অনেক মানুষের পঙ্গু হয়ে যাওয়া এবং মেয়েদের ধরে নিয়ে পাক সেনাদের হতে তুলে দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
রাঙ্গা বলেন, “এই রায়ে আমার পরিবারের সদস্যরা খুশি। রায় যেন দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেজন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।”
বদরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মাহবুবর রহমান হাবলু বলেন, “বদরগঞ্জবাসী আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। একাত্তরে আজহারের নির্যাতনের স্মৃতি এখনও অনেক মানুষ বয়ে বেরাচ্ছে। সরকার যেন রায় দ্রুত কার্যকর করে।”
বদরগঞ্জ উপজেলার কৃষক কমল রায়, ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিনসহ আরও অনেকে একই দাবি জানিয়েছেন।