গোপালগঞ্জে ভিসির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থার শিগগির কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠিত তদন্ত দল প্রধান।
Published : 26 Sep 2019, 06:09 PM
গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যিালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) পাঁচ সদস্যের তদন্ত দল প্রধান ড. মো. আলমগীর বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন।
‘এখন বিষয়টি আমাদের কাছে পরিস্কার হয়েছে’ উল্লেখ করে তদন্ত কাজ শেষে আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চেয়ারম্যান মহোদয়কে বিষয়টি জানাব। তারপর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
“আমরা আশা করি এমন একটি সিদ্ধান্ত হবে, যাতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র. শিক্ষক, কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি সুন্দর অবস্থা বিরাজ করবে। এ বিশ্বদ্যিালয়টি আবার অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণার দারে ফিরে আসতে পরে।”
এর আগে পাঁচ সদস্যের তদন্ত দল হামলায় আহত শিক্ষার্থী, সাধারণ ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে, লিখিত বক্তব্যও গ্রহণ করেন। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তও করেন।
সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দানের সময়সীমার দ্বিতীয় দিন দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের সাথে কথা বলেন। ভিসি লিখিত বক্তব্যও দেন ইউজিসির তদন্ত টিমের কাছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সময়িক বহিষ্কার করার পর সমালোচনার মুখে ১৮ সেপ্টেম্বর সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভিসি প্রফেসর খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
এ আন্দোলন ঠেকাতে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নামলে একদল বহিরাগত হামলা চালায় শিক্ষার্থীদের উপর। এ হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবীর, সহকারী অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হক শাহিন ও ড. মো. তরিকুল ইসলাম সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আট দিন ধরে শিক্ষার্থীরা টানা আন্দোলন করে আসছে।
বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা বলেন, “বুধবার ইউজিসির তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মৌরি আজাদ ঢাকা থেকে রওনা দিয়েই আমাকে ফোন দেয়। তিনি আমার ও ছাত্রী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়ার অভিযোগ শুনবেন বলে জানান।
“আমি তাদের সামনে অভিযোগ তুলে ধরেছি। তারা তাদের মতো করে লিখে নিয়েছেন “
হামলায় আহত রসায়ন বিভাগ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল আলম বলেন, “আমার সাথে হামলার দিন কী ঘটেছিল এগুলো জিজ্ঞাসা করেছেন। আমার মেডিকেল রিপোর্ট, নাম ও মোবাইল নম্বর নিয়েছেন।”
বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (বিজিই) বিভাগ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মানস তালুকদার জানান, ২১ সেপ্টেম্বরের হামলায় আমার হাত ভেঙে যায়। এছাড়া বাঁশের লাঠি দিয়ে আমাকে সহ ২০ জনকে পেটানো হয়।
“হামলাকারীরা সবাই ভিসির গুন্ডাবাহিনী ছিল।
“আমরা যাদেরকে চিনতে পেরেছি তাদের নাম ইউজিসির তদন্ত কমিটির কাছে বলেছি। তদন্ত কমিটি সেগুলো আন্তরিকতার সাথে শুনেছেন। আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।”
হামলায় আহত কৃষি বিভাগ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন বলেন, “হামলার সময়ের যা কিছু আমার চোখের সামনে ঘটেছিল। কীভাবে মেয়েদের গায়ে হাত তোলা হয়েছিল সবকিছুই বলেছি।
“প্রাণ বাঁচাতে অনেক ছাত্র-ছাত্রী বিল ঝাঁপিয়েছে বলেও তদন্ত কমিটির কাছে বলেছি।”
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন-ইউজিসির সদস্য ড. সাজ্জাদ হোসেন, ড. দিল আফরোজ বেগম, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক কামাল হোসেন ও কমিটির সদস্য সচিব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক মৌরি আজাদ শিক্ষার্থী।
বিকালে এই তদন্ত দলের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।