মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময়ে এসেও রংপুর সদর আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে অস্থিরতা ও অসন্তোষ।
Published : 15 Sep 2019, 02:27 PM
সদ্য প্রয়াত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এই আসনে নানা নাটকীয়তার পর তার ছেলে রাহগীর আল মাহী সাদকে (সাদ এরশাদ) পেয়েছেন দলীয় মনোনয়ন। তবে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ।
জিয়ার আমলের মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে রিটা রহমান মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির। রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু পেয়েছেন দলের প্রাথমিক মনোনয়ন।
তবে সমঝোতা হলে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “রংপুরের আসনটি আসলে জোটের নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় পার্টির ছিল, এরশাদ সাহেবের আসন। এখন জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের আসনে। এখন তারা আলাদাভাবে নির্বাচনে আসলে আসতে পারে, সেটা তাদের ব্যাপার।
“আর যদি জোটগতভাবে আমাদের কাছে আসনটি চায়… তখন আমরা বিবেচনা করব। এই মুহূর্তে আমাদের প্রার্থী আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না আলোচনা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।”
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার জন্য তারা ‘কিছুটা আলাপ আলোচনা’ করেছেন।
নৌকা মার্কার প্রার্থীর দাবিতে শনি ও রোববার নগরীর বেশ কয়টি স্থানে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন করতে দেখা যায়।
নানান জল্পনার পর রংপুর সদর আসনে জাপার মনোনয়ন সাদ এরশাদ পাওয়ায় খুশি হতে পারেননি পার্টির স্থানীয় অনেক নেতাকর্মী।
মহানগর জাপা সভাপতি ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই।
“সাদ এরশাদের পক্ষে জাপা নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে কিনা, তা আমি বলতে পারব না।”
এ নিয়ে মনোনয়নবঞ্চিত মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ইয়াসির আহমেদও ক্ষুব্ধ। তার অনুসারীদেরও নির্বাচনী মাঠে দেখা যায়নি।
মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকমকে বলেন, “জিএম কাদের যদি নিজের অবস্থান শক্ত করতে না পারেন, দল শক্তিশালী করা তার পক্ষে কঠিন হবে।
“আমাকে মনোনয়ন বোর্ড সিলেক্ট করে পরে আবার সাদকে মনোনয়ন দেওয়া হলো। এতে শুধু আমাকেই নয়, রংপুরবাসীকেও অপমান করা হয়েছে।”
নিজের দল পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশকে বিলুপ্ত করে রিটা রহমান হাতে পেয়েছেন ধানের শীষ। বিএনপি তাকে প্রার্থী করায় খুশি হতে পারেননি রংপুরের অনেক নেতাকর্মী।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, “হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে দলীয় নেতাকর্মীরা হতাশ।
“ফলে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না রিটা রহমানের পক্ষে নামবেন কিনা।”
অন্য দিকে নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টির মধ্যে সমঝোতা নিয়ে শঙ্কায় ভুগছে রংপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজুকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে ধরে রাখার জন্য চলছে নানা তোড়জোড়।
এরই মধ্যে রাজুকে নৌকার প্রার্থী রাখার দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও সাহিত্য সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধন করা হয়।
শনি ও রোবাবর রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে, কেন্দ্রীয় বাসটার্মিল এলাকায়, মডার্ন মোড় ও পাগলাপীরে নৌকার মার্কার প্রার্থীর দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে।
এ আসনে নৌকা ছাড় দেবে কি দেবে না, এমন কোনো ইঙ্গিত না পাওয়ার দাবি করে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকমকে বলেন, “তবে রংপুরের মানুষ আর ছাড় দিতে চান না।
“সবাই নৌকা মার্কা চায়। তারা দীর্র্ঘদিন পর নৌকা পেয়েছে, সবাই মুখিয়ে আছেন নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য।”
দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের জন্য শতভাগ প্রস্তুত রয়েছেন এমন দাবি করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকমকে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত আশাবাদী, এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
“শেষ পর্যন্ত যদি জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছাড় দেওয়া হয়, তবে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।”
১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল গণি স্বপন জেতার পর থেকে রংপুর আসনটি আর কখনও জাতীয় পার্টির হাতছাড়া হয়নি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের শেষ দুটি নির্বাচনে এ আসন থেকে এমপি হন পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৬ সেপ্টেম্বর। এদিনই নিশ্চিত হয়ে যাবে একাদশ সংসদের ৫ অক্টোবরের এই উপনির্বাচনের ভোটের দিন ব্যালট পেপারে কে থাকছেন আর কে বসে যাবেন।