জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এরশাদ ৯০ বছর বয়সে রোববার মারা যান।
সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদের দাফন বুধবার সেনা কবরস্থানে হবে বলে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে এটাও চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ।
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর এরশাদ নয় বছর রাষ্ট্রপতি থাকার সময় তার জেলা রংপুরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কাজ হয়েছিল, যার জন্য তাকে স্মরণ করেন জেলাবাসী।
সকালে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকাহত মানুষ জাতীয় পার্টির জেলা কার্যালয়ে ভিড় করেন। তারা দাবি তোলেন, রংপুরের সন্তান এরশাদকে যেন তার বাড়ি পল্লী নিবাসেই দাফন করা হয়।
সকাল ১১টায় ওই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
তিনি বলেন, “আমাদের এতিম করে রাজনৈতিক পিতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ চিরবিদায় নিয়েছেন। কিছু বলার ভাষা নেই। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) স্যারের মরদেহ আসবে রংপুরে। তার জানাজার নামাজ বাদ জোহর রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
দাফনের বিষয়ে তিনি বলেন, “তিনি অসুস্থ হওয়ার কিছুদিন আগে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তার অন্তিম সমাধি নিজ বাড়ি পল্লী নিবাসে করার জন্য ওছিয়ত করে যান। এজন্য তিনি একটি সমাধি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনাও করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় সে পরিকল্পনা জনসমক্ষে বলে যেতে পারেননি।
“সে কারণে আমরা জাতীয় পার্টি রংপুর বিভাগ, জেলা, মহানগরসহ সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনসহ রংপুরবাসীর পক্ষ থেকে জাপা চেয়ারম্যানের দাফন তার ওছিয়ত করা জায়গায় করার আবেদন জানাই।”
রংপুরের আরও অনেকেও একই দাবি তুলেছেন।
এরশাদভক্ত খলিশাকুড়ির জয়নাল আবেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকমকে বলেন, “অমপুরত সারা জীবন তায় হামার ঘরের ছাওয়া হিসেবে হামার কাছোত আছিলো। এরশাদ হামার জাগার ছাওয়া। হামার এমপি ছিলো,এ্যালা মরার পর ক্যানে তায় হামার বাইরোত থাকবে না বাহে কন তোরা। আগত রংপুর যেমন তার ঠিকানা আছিলো, মরিয়াও য্যান তার শেষ বাড়ি অমপুরত হয়।”
এই বৃদ্ধ কখনও টেলিভিশনের পর্দায় কখনও বা পত্রিকার পাতায় এরশাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিতেন।
আরেক এরশাদভক্ত ময়নাকুটির ভ্যানচালক আনোয়ারুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারা জীবন এরশাদ সাইবোক (সাহেব) ভোট দিনো। দুনিয়ার মানুষ জানে এরশাদ সাইব রংপুরের ছাওয়া। এ্যালা শোনতোছি তার কবর নাকি রংপুরের বাইরোত হইবে। মুই চাও রংপুরের মাটিতে তার জাগা হোউক।”
জাতীয় ছাত্রসমাজের জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক আল-আমিন সুমনও বলেন, “তার প্রতি রংপুরের মানুষের আলাদা ভালোবাসা রয়েছে, যা কোনোদিনই শোধ করা যাবে না। তাই আমি মনে করি, স্যারের সমাধি রংপুরে করা হোক। রংপুরের মানুষ যেন তার সমাধিতে ফুল দিয়ে ভালোবাসাটুকু জানাতে পারে।”
মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, “নব্বইয়ে সরকার পতনের পর এরশাদ স্যার জেলে বন্দি ছিলেন। রংপুর থেকেই তার মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়েছিল। রংপুরের মানুষই তাকে ভোট দিয়ে জেল থেকে মুক্ত করেছে। জাতীয় পার্টির জন্য, এরশাদ স্যারের জন্য এ অঞ্চলের মানুষের ভালোবাসার কোনো ঘাটতি নেই। তাই দলের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য রংপুরের মাটিতেই স্যারের সমাধি করা উচিৎ।”
জাতীয় পার্টিকে ধরে রাখতে হলে এরশাদের সমাধি রংপুরে করাটা বেশি জরুরি বলে মনে করছেন রংপুর সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদার রহমান মিলন।
তিনি বলেন, “জাতির জনকের সমাধি তার গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায়। সেখানকার মানুষরা বঙ্গবন্ধুকে যেমন আগলে রেখেছেন, আমরাও আমাদের নেতাকে আগলে রাখব।”
রংপুরে পল্লীনিবাস ভবনের তত্ত্বাবধায়ক মোসলেম উদ্দিন জানান, এরশাদের দাফনের বিষয়ে তাকে কিছু জানানো হয়নি।
তবে তিনি বলেন, “স্যার রংপুরে আসলে এই বাসাতে থাকতেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে তার মৃত্যুর পর এখানে সমাধি তৈরি করার কথা বলেছেন। জায়গাও দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখন যে কোথায় তার সমাধি হবে, তা আমার জানা নেই।”