ভোটের দিন রাতে চল্লিশোর্ধ এক নারীকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় নোয়াখালী এসে তার পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা।
Published : 04 Jan 2019, 09:05 PM
শুক্রবার বেলা ২টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে এসে তারা ওই নারীর সঙ্গে কথা বলেন।
পরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ওই নারীকে জানাতে এসেছি আমরা তার পাশে আছি। আর আমরা প্রশাসনকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, দেরি না করে প্রকৃত আসামিদের এজাহারভুক্ত করে গ্রেপ্তার করা হোক এবং দ্রুত বিচারের যে আইন আছে সেই আইনে এই বিচার করা হোক।”
“মূল ইন্ধনদাতাসহ জড়িতদের প্রত্যেককে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, ভুক্তভোগী পরিবারে নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করার দাবি জানাই। পাশাপাশি কোনো গোষ্ঠী বা মহল যাতে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেজন্য জনগণকে যুক্ত করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।”
বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শুভ্রাংশ চক্রবর্তী, বজলুর রশিদ ফিরোজ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের পলিটব্যুরোর সদস্য আব্দুর সাত্তার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আকবর খান, সিপিবির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী এ সময় ছিলেন।
গত ৩০ ডিসেম্বর ভোটের রাতে সুবর্ণচরের মধ্যবাগ্যা গ্রামে ওই ধর্ষণের ঘটনার পর এ পর্যন্ত মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন সাবেক ইউপি সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রয়েছেন।
ধর্ষণের শিকার ওই নারীর অভিযোগ, ভোটের সময় নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এরপর রাতে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনের ‘সাঙ্গোপাঙ্গরা’ বাড়িতে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করে।
জেলার পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ বিডিনিউজ টেয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাসান আলী বুলু ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। ভোটকেন্দ্রে তার সঙ্গেই ওই নারীর ঝামেলা হয়েছিল। পরে সে ১০ হাজার টাকায় কয়েকজন ইটভাটা শ্রমিককে ভাড়া করে।”
চরজব্বার থানায় ওই নারীর স্বামীর দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা তার বসতঘর ভাংচুর করে, ঘরে ঢুকে বাদীকে পিটিয়ে আহত করে এবং সন্তানসহ তাকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে।
মামলার এজাহারে মোট নয়জনকে আসামি করা হলেও সেখানে চর জুবিলী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য রুহুল আমিনের নাম না থাকায় বুধবার রাতে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুকের কাছে হতাশা প্রকাশ করেন ওই নারী।
এরপর সেই রাতেই জেলা সদরের একটি হাঁস-মুরগির খামার থেকে রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
রুহুল সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এ ঘটনার সঙ্গে দলীয় সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তবে রুহুল আমিন গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে দল থেকে বহিষ্কারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
ওই নারী এখন নোয়াখালী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ডাক্তারি পরীক্ষায় তাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে জানিয়ে ইতোমধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড।
দেখা করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা
সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিহাব উদ্দিন শাহিনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ওই নারীর সঙ্গে দেখা করে তাদের সহানুভূতির কথা জানিয়েছেন।
শিহাব বলেন, “এই অমানবিক, পাষবিক, নির্দয়, নিষ্ঠুর ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এটা কোনো দলের ঘটনা নয়, এটা কোনো গোষ্ঠীর ঘটনা নয়। এটা মানবতার ওপর আঘাত।
“আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে এবং নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর পক্ষ থেকে তাকে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করতে আসলাম। আমাদের কথা একটাই, অপরাধী যে-ই হোক, তার বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স। ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে সব রকমের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। আমাদের সংসদ সদস্য তার (ওই নারীর) যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয়, পুনর্বাসন ও আইনি সহায়তার দায়িত্ব নিয়েছেন।”