রোববার দুপুরে তাকে রংপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে ঝাড়ু মিছিল ও জুতা প্রদর্শন করেন এবং মইনুলকে বহনকারী গাড়িতে ইট, জুতা ও পচা ডিম নিক্ষেপ করেন।
এ সময় আদালত চত্বরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে আহত হন অন্তত ১৫ জন।
পরে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার আলতাব হোসেন জানান।
আদালত প্রাঙ্গণে এই গণ্ডগোলের মধ্যে রংপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আরিফা ইয়াসমিন মুক্তা জামিন খারিজ করে দিলে মইনুলকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় বলে এ আদালতের পিপি আবদুল মালেক জানান।
তিনি বলেন, বিচারক আগামী ২২ নভেম্বর এ মামলার শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখেছেন।
এর মধ্যে রংপুরের আদালতে মানহানির এ মামলাটি দায়ের করেন মিলি মায়া নামের এক মানবাধিকারকর্মী। মামলার আর্জিতে ১০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তিনি।
এ মামলায় গত ২৩ অক্টোবর রাতে ঢাকার উত্তরা থেকে মইনুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ঢাকার হাকিম আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পুলিশ জানায়, রংপুরের আদালতে হাজির করার জন্য শনিবার বিকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে ব্যারিস্টার মইনুলকে রংপুর কারাগারে নিয়ে আসা হয়।
এদিকে মইনলুকে আদালতে আনার খবরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই আদালত চত্বরে ভিড় জমায়। তারা আদালত ভবনের সামনে মিছিল করে মইনুলের বিপক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আদালত চত্বরে কয়েক দফা ঝাড়ু মিছিল করেন। মইনুল হোসেনকে নিয়ে পুলিশের একটি মাইক্রোবাস আদালত চত্বরে পৌঁছালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সাদা রঙের ওই মাইক্রোবাস থেকে মইনুলকে আদালতের মূল প্রবেশ পথে নামানোর সময় শুরু হয় ইট, জুতা আর পচা ডিম নিক্ষেপ। এ পরিস্থিতিতে পুলিশ ব্যারিস্টার মইনুলের মাথায় হেলমেট পরিয়ে দেয়। মইনুলের আইনজীবীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধ্বস্তিও হয়।
পরে পুলিশের ঘেরাওয়ের মধ্যে মইনুল হোসেনকে নেওয়া হয় অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা ইয়াসমিন মুক্তার আদালতে। আদালতের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে সবার যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় আদালত চত্বরের একপাশ থেকে বিএনপির কিছু কর্মী মইনুলের পক্ষে ও খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান ধরলে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
মহানগর পুলিশের এসি আলতাব হোসেন বলেন, পুলিশ দুই পক্ষের মধ্যে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার সঙ্গে ঢিল ছোড়া শুরু হলে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সংঘর্ষের মধ্যে ৫ পুলিশ সদস্যসহ ১৫ জন আহত হন। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলশাদ হোসেন মুকুল মাথায় আঘাত পান। আহত কয়েকজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রনি এ ঘটনার জন্য ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীদের দায়ী করে বলেন, “তারা আওয়ামী লীগের নামে অশ্লীল ভাষায় স্লোগান দিতে শুরু করলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা বাধা দেয়। এক পর্যায়ে ছাত্রদল ও যুবদল কর্মীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে সংঘর্ষ বাঁধে।”
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুল রহমান টুটুল বলেন, “আমরা আদালত চত্বরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলাম। কিন্তু জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে বিএনপি যে কাণ্ড ঘটালো তা কাম্য ছিল না।”
অন্যদিকে রংপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি সামছুজামান সামু বলেন, “ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে উপস্থিত হলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। আমাদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী এ সময় আহত হয়।”
তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।