মইনুল হোসেন কারাগারে

সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে কটূক্তির ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2018, 08:08 AM
Updated : 23 Oct 2018, 12:55 PM

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টাকে মঙ্গলবার রংপুরের ওই মামলায় আদালতে হাজির করা হলে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম জামিন শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

জামিন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর আদালত প্রাঙ্গণে ব্যাপক হৈ চৈ ও স্লোগান শুরু করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কামাল হোসেনের উদ্যোগে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে সক্রিয় আছেন ব্যরিস্টার মইনুল। সম্প্রতি এক টেলিভিশন আলোচনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলার পর থেকে সমালোচনার মুখে রয়েছেন তিনি।

মইনুল পরে টেলিফোন করে ক্ষমা চাইলেও মাসুদা ভাট্টি প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। তা না করায় মইনুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন মাসুদা ভাট্টি।

পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে মানহানির অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয় মইনুলের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে রংপুরের একটি মামলায় সোমবার রাতে ঢাকার উত্তরায় আ স ম রবের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনেও মইনুলের কটূক্তির আলোচনা হয়। তখন শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা প্রতিবাদ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা করার করবে। আপনারা মামলা করেন, আমরা যা করার করব।”

রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোমবার ওই মামলাটি দায়ের করেন মানবাধিকারকর্মী মিলি মায়া। সেখানে মানহানির অভিযোগে ১০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তিনি।

মইনুলকে রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে রেখে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। তার পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। অন্যদিকে বাদীপক্ষে ছিলেন কাজী নজিবুল্যাহ হীরু।

খন্দকার মাহবুব শুনানিতে বলেন, এই মামলা হয়েছে জামিনযোগ্য ধারায়। সুতরাং মইনুল হোসেনকে জামিন দেওয়া যায়।

এরপর বিএনপিপন্থি আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, গোলাম মোস্তাফা খান, সানাউল্লাহ মিয়া ও নূরুজ্জামান তপনও জামিনের পক্ষে যুক্তি দেন। 

বাদীপক্ষে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা কাজী নজিবুল্যাহ হীরু জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, এ মামলার ধারা জামিনযোগ্য হলেও দেশ ও সমাজের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে আদালত তা নামঞ্জুর করতে পারে।

“মেয়ের বয়সী মাসুদার কাছে তিনি লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তার স্ট্যাটসের লোকের এ রকম কটূক্তি মোটেও শোভা পায় না। তার উক্তি গোটা নারী সমাজের বিরুদ্ধে গেছে। নারী সমাজ অপমানিত হয়েছে।”

তার এ মন্তব্যের পর আসামি মইনুলের আইনজীবীরা আদালতে শোরগোল শুরু করেন। এ সময় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবুও জামিন আবেদনের বিরোধিতায় যুক্তি দেন।

প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা শুনানির পর বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে মইনুল হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আদেশের পর খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, “এই মামলা জামিনযোগ্য। জামিন না দেওয়ার একমাত্র কারণ হল সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন। এছাড়া জামিন না হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

অন্যদিকে আব্দুল্লাহ আবু বলেন, “এই মামলার নথি যেহেতু রংপুরে, জামিনের আবেদন রংপুরেই করতে হবে। এই গ্রাউন্ডে আমরা শুনানি করেছি এবং জামিন নামঞ্জুর হয়েছে।”