চল্লিশ বছর মানুষ গড়ার কাজ করার পর অবসরে গিয়ে জীর্ণ কুটিরে বাস করতেন মাগুরার শিক্ষক কৃষ্ণ গোপাল ভট্টাচার্য্য। অর্থকষ্টে থাকলেও কারও কাছে হাত পাতেননি শালিখা উপজেলার গঙ্গারামপুর পিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।
Published : 05 Nov 2017, 10:36 PM
গত ৯ জানুয়ারি এ নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে সংবাদ প্রকাশের পর বাড়ি বানিয়ে দিতে এগিয়ে আসেন তার ছাত্ররা । রোববার নতুন বাড়িতে প্রবেশ করেন ৮০ বছর বয়সী কৃষ্ণ গোপাল।
এ সময় প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আব্দুল হান্নান, সুইডেন প্রবাসী সাইফুর রহমান, যশোর আব্দুর রাজ্জাক কলেজের শিক্ষক জুলফিকার আলী, খলিশাখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আইয়ুব হোসেন, স্কুলশিক্ষক মনোজ কুমার কুমার মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।
এ শিক্ষককে বাড়ি করে দেওয়ার মূল উদ্যোক্তা সুইডেন প্রবাসী মাহবুবুর রহমান মৃধা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ ধরনের কাজে সাধারণ মানুষ যেন এগিয়ে আসে সেজন্য উদাহরণ তৈরি করতে প্রচলিত রীতি ভেঙে রাজনৈতিক ও প্রশাসনের কাউকে এই গৃহ প্রবেশ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। প্রয়াত শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা সাধন কুমর ভট্টাচার্য্যর স্ত্রী অর্চনা রানী ভট্টাচার্য্য গোপাল স্যারকে বাড়ির চাবি বুঝিয়ে দেন।
অবসরের পর শালিখা উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের মনোখালী গ্রামের বাড়িতে থাকছিলেন গোপাল ভট্টাচার্য্য। পুরনো সেই বাড়িটিই ভেঙে করা হয়েছে নতুন আধপাকা বাড়ি। বাড়িটিতে রয়েছে দুইটি কক্ষ।
চিরকুমার গোপালের পরিবারের সদস্য বলতে রয়েছেন একমাত্র ছোট ভাই। বড় ভাইয়ের এক মেয়ে রয়েছেন, যাকে পাশের ইউনিয়নে বিয়ে দিয়েছেন। বাড়িতে ৯০ শতাংশের মতো জমিতে গাছগাছালি রয়েছে। কিছু অংশে চাষবাস হয়। তাতে তার চলে যায়।
অশীতিপর এই শিক্ষকের বাবা পরেশ নাথ ভট্টচার্য্য ১৯২৪ সালে গঙ্গারামপুর প্রসন্ন কুমার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পন্ডিত হিসেবে যোগ দেন। ছেলের মতো বাবাও ১৯৬৪ সালে অবসরের পর শূন্য হাতে বাড়িতে ফিরেছিলেন এলাকার সবার শ্রদ্ধেয় পরেশ নাথ।
নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর ১৯৬৪ সালে বাবার পথ ধরে গোপাল ভট্টাচার্য্যও গঙ্গারামপুর প্রসন্ন কুমার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা শুরু করেন। প্রথমে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে পড়ালেও পরে তিনি শুধু ইংরেজি বিষয়ে পাঠদান করাতেন। ১৯০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে তিনি প্রায় ৪০ বছর শিক্ষকতা করে অবসরে যান।
বাবা অবসরে আসার সময় স্কুল থেকে উপহার হিসেবে ছাতা ও লাঠি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অবশ্য এসব নিয়ে তার আক্ষেপ নেই। বরং তিনি কিছু না নেওয়ার জন্য আত্মতৃপ্তি বোধ করেন।