১৪৪ ধারা ভেঙে বিবাদমান জমি জবর দখলের তথ্য সংগ্রহের সময় হামলার শিকার হন বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিকরা।
Published : 17 Mar 2024, 02:21 PM
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে ১৪৪ ধারা ভেঙে বিবাদমান জমি জবর দখলের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে চার সাংবাদিককে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে।
শনিবার রাত ১০টার দিকে পাঁচবিবি থানায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দৈনিক বাংলাদেশ সমাচারের পাঁচবিবি উপজেলা প্রতিনিধি জুয়েল শেখ মামলাটি করেন বলে জানিয়েছেন ওসি ফয়সাল বিন আহসান।
আহত অন্য সাংবাদিকরা হলেন- মাছরাঙ্গা টেলিভিশন ও ইংরেজি দৈনিক দ্যা বিজনেসের জয়পুরহাট সংবাদদাতা আল মামুন, দৈনিক সংবাদ সারা বেলা’র পাঁচবিবি উপজেলা প্রতিনিধি বাবুল হোসেন ও দৈনিক মুক্ত সকালের জয়পুরহাট প্রতিনিধি আব্দুর রাজ্জাক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, উপজেলার পিরপাল গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য কৈলাশ মাহাতোর সঙ্গে একই গ্রামের রায়হান চৌধুরীর জমিজমা নিয়ে বিবাদ চলছিল।
বিষয়টি নিয়ে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে ১৪৪ ধারা জারি এবং বিরোধ নিষ্পত্তি না পর্যন্ত ওই সম্পত্তিতে কোনো পক্ষই প্রবেশ করতে পারবেন না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
শনিবার দুপুরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে প্রভাবশালী রায়হান চৌধুরীর পক্ষ নিয়ে স্থানীয় মহিপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে ৯ যুবক ওই বিবাদমান সম্পত্তি জবর দখল করতে যান।
তারা সেখানে এস্কেভেটর বা ভেকু মেশিন নিয়ে মাটি খনন করতে গেলে অসহায় কৈলাশ মাহাতো উপায়ন্তর না দেখে স্থানীয় সাংবাদিকদের খবর দেন।
পরে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের এক পর্যায়ে মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে যুবকরা তাদের ওপর হামলা করে। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বেধড়ক মারপিট করে সাংবাদিকদের আহত করেন।
সাংবাদিকদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
পরে রাতে থানায় মামলা করেন আহত সাংবাদিক জুয়েল শেখ।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, একই উপজেলার মালঞ্চা গ্রামের সজীব, গোপালপুর গ্রামের রনি মিয়া, একই এলাকার অটোরিকশার কারিগর আলম ও পারভেজ, পল্লিবিদ্যুৎ এলাকার শহিদুল ইসলাম, দানেজপুর এলাকার সোহাগ, বাঁশকুর গ্রামের কামরুল ইসলাম এবং নাওডোবা গ্রামের শাহনুর রহমান।
এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে জেলা প্রেসক্লাব সভাপতি রাশেদুজ্জামান ও পাঁচবিবি উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি রুহুল আমিন জানান, অবিলম্বে অভিযুক্তদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল মোবাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “আমাদের বিরুদ্ধে তারা যে অভিযোগ করেছেন, তা সঠিক নয়, আর আদিবাসীর যে জমির কথা বলা হয়েছে তাও সঠিক নয়।”
“প্রকৃত ঘটনা হলো, আমার ভেকু মেশিন ওই গ্রামের একজন ভাড়া নিয়ে ভরাট হওয়া পুকুর পুনঃখনন করছিলেন। সেখানে গিয়ে তারা চাঁদা দাবি করেন, তা নাহলে কাজ বন্ধ করতে বলেন।”
মাহমুদুল পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “ভেকুর ড্রাইভার কাজ বন্ধ না করলে ওই সাংবাদিকরা ড্রাইভারকে চড়-থাপ্পর মারেন। তখন ঘটনাস্থলে থাকা পুকুর খনন কাজের লোকজন উত্তেজিত হলে ধ্বস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।”
পরে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন বলে দাবি করেন এই ছাত্রলীগ নেতা।
ওসি ফয়সাল বিন আহসান জানান, মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে, আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযানও চলছে।