ওসি বলেন, আশিকুরের জবানবন্দি নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
Published : 03 Feb 2024, 07:39 PM
নীলফামারী সদর উপজেলায় হত্যার শিকার মা ও দুই কন্যাশিশুকে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে। আত্মহত্যার চেষ্টাকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদের বাবার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের দারোয়ানী পুরাতন বন্দর বাজার গ্রামের বাড়ির শয়নঘর থেকে ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান বাবু মোল্লার স্ত্রী তহুরা বেগম (৩৫), তাদের দুই মেয়ে আয়েশা আক্তার তানিয়া (৮) ও জারিনের (৫) মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ সময় বাড়ির ফটক থেকে গলাকাটা অবস্থায় চড়াইখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মোল্লার ছেলে আশিকুরকেও উদ্ধার করে প্রতিবেশীরা। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশের প্রাথমিক ভাষ্য, আশিকুর স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। অপরদিকে পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ব্যবসায় আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল পরিবারটি।
শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে পরিবারের কাছে মা ও দুই মেয়ের মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। বিকাল ৪টার দিকে নীলফামারী সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে তাদের মরদেহ নেওয়া হয় চড়াইখোলা ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামে। এরপর বাড়ির পাশের মাঠে একসঙ্গে তিনজনের জানাজা হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি তাদের শায়িত করা হয়।
আরও পড়ুন:
নীলফামারীতে স্ত্রী ও ২ মেয়েকে ‘শ্বাসরোধে হত্যার পর আত্মহত্যা’র চেষ্টা
নীলফামারীতে স্ত্রী-সন্তান হত্যা: দুর্দশাই কারণ?
নীলফামারী সদর থানার পরিদর্শক মো. তানভীরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাতে হত্যার শিকার তহুরা বেগমের ছোট ভাই মো. আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় আশিকুরকে আসামি করা হয়েছে। তার জবানবন্দি নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। পুলিশ ও সিআইডির ক্রাইম সিন হত্যারহস্য উদঘাটনে কাজ করছে।
সরজমিনে শনিবার বেলা ১১টায় আশিকুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির ফটকে তালা দেওয়া। ফটকের সামনে একটি ব্রেঞ্চে বসে আছেন একদল গ্রাম পুলিশ। প্রতিবেশীরা তখনও মরদেহের অপেক্ষায় ছিলেন।
হত্যাকাণ্ড নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। অনেকের ধারণা, ব্যবসায় ক্ষতি ও ঋণগ্রস্ত হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন আশিকুর। মানসিক সুস্থতার জন্য চিকিৎসাও নিয়েছিলেন তিনি। কিছুদিন সুস্থ থাকলেও ফের তার আচরণে অসংলগ্নতার পরিলক্ষিত হচ্ছিল।
আশিকুর রহমান বাবু মোল্লার করাতকলের সাবেক কর্মচারী রবিদুল ইসলাম (৩৫) বলেন, “প্রায় তিন মাস আগে অতিমাত্রায় ঘুমের বড়ি খেয়ে অসুস্থ হয়েছিলেন আশিকুর। এরপর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল।
“তখন শুনেছিলাম প্রায় ছয় মাস ধরে নিয়মিত ঘুমাতে পাড়তেন না তিনি। রাতে ঘুমের বড়ি খেতেন। পরে করাতকলটি তিনি বিক্রি করে দেন। আমি এখন নতুন মালিকের অধীনে সেখানেই কাজ করছি।”
আশিকুরের খালাতো বোন রেহেনা পারভীন (৪৫) বলেন, “পরিবারটি একবারে ছিমছাম ছিল। আমার ভাই এবং তার স্ত্রীর মধ্যে কোনো সময় ঝগড়া-বিবাদ দেখিনি। শুনেছি আমার ভাইয়ের নাকি ব্যবসায় লস হয়েছে। এ কারণে ঋণ হয়েছে বেশকিছু টাকা। এরপর থেকে নানা দুঃচিন্তায় থাকার কথা শুনেছি। তবে এ ঘটনা কিভাবে ঘটেছে সেটি বলতে পারব না।”