২৬ নভেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান।
Published : 02 Dec 2024, 06:59 PM
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা। এ ছাড়া একই দাবিতে ১২৭ জন শিক্ষকের স্বাক্ষরযুক্ত প্রতিবাদলিপি বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবাদলিপিতে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শিক্ষাবিদ একজনকে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় এই অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয় বলে মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দীন জানান।
২৬ নভেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান। এর আগে তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ছিলেন। ওইদিন রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন তিনি।
তার নিয়োগের প্রতিবাদে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। পরে উপাচার্যের কার্যালয়ে যান সদ্য নিয়োগ পাওয়া ট্রেজারার। শিক্ষার্থীরা উপাচার্য কক্ষে ঢুকে ট্রেজারারের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ আনেন এবং তাকে যোগদানে বাধা দেন। যদিও সেদিন শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেছিলেন আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
শিক্ষার্থীদের পর কোষাধ্যক্ষের নিয়োগের প্রতিবাদে সামিল হলেন শিক্ষকরাও।
মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দীন বলেন, “আবু হেনা মোস্তফা কামালকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওই পদে তিনি মন্ত্রণালয়ে যোগদানও করেছেন। এ পদে তিনি যোগদানের পর থেকেই শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারই ধারবাহিকতায় আধা ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
“তাকে নিয়োগ দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে ১২৭ জন শিক্ষকের স্বাক্ষরযুক্ত প্রতিবাদলিপি চিঠি আকারে শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব, ইউজিসি, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে।”
আগামীকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে মানববন্ধন করা হবে জানিয়ে অধ্যাপক জামাল উদ্দীন বলেন, সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার কোনো আমলাকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে মেনে নিতে পারছি না। আমাদের অধিকাংশ শিক্ষক এই দাবির সঙ্গে একমত। আমরা সরকারকে অনুরোধ করব, যেন এই সাবেক সেনা কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন শিক্ষাবিদকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক।
“যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর বা দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের পুনর্বাসন করা মানেই জুলাই বিপ্লবের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা। তাকে কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণ করা না হলে আমরা শিক্ষকরা সামনে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।”
সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু জিহাদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পারিচালিত হবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শিক্ষাবিদদের দিয়ে। অথচ একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে এই নিয়োগ বাতিল করে একজন স্বনামধন্য শিক্ষাবিদকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক।”
অবস্থান কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিক, সৈয়দ আশিক-ই-ইলাহী, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল আলিম বাসের ও সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মোস্তাকিম রহমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য নিয়োগ পাওয়া কোষাধ্যক্ষ আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে না যাচ্ছি ততক্ষণ পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না।”