“তোফাজ্জল নিখোঁজের আগে মাদক কারবারি স্বপন মিয়ার সঙ্গে তার ঝগড়া হয়েছিল।”
Published : 12 Jun 2024, 11:30 AM
ঢাকার সাভার উপজেলায় এক মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ির মাটি খুঁড়ে নিখোঁজ এক পোশাক শ্রমিকের কঙ্কাল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব জানান, মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলায় আনন্দপুর সিটিলেন এলাকার শীর্ষ মাদক কারবারি স্বপনের নির্মাণাধীন দোতলা বাড়ির নিচতলার থেকে খুলি ও হাড়গুলো পাওয়া যায়।
পুলিশ বলছে, ওই খুলি-হাড় নিখোঁজ পোশাক শ্রমিক তোফাজ্জল হোসেন টোটনের। ২৭ বছর বয়সী তোফাজ্জল সাভার পৌর এলাকার ইমান্দিপুর এলাকার সালামত মিয়ার ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।
আর ৩২ বছর বয়সী মাদক কারবারি স্বপন মিয়া ওই এলাকার শাহজাহানের ছেলে। ইমান্দিপুর ছাড়াও সাভারের বিভিন্ন এলাকায় তার কয়েকটি বাড়ি রয়েছে।
এর আগে ৬ জুন সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খনিজনগরে স্বপনের বাড়ির পাশ থেকে মাটিচাপা অবস্থায় সীমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সাভার থানায় সীমার পরিবার মামলা করে।
ওসি রিয়াজ উদ্দিন বলেন, “গত ১৩ মে অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারি স্বপন মিয়ার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খনিজনগর এলাকার বাড়ি থেকে ৩০০ ইয়াবাসহ ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হামিদ মিয়া ও স্বপনের স্ত্রী পপি আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
“তাদের গ্রেপ্তারে সীমা বেগম নামে এক প্রতিবেশী নারী সহায়তা করেছিলেন। ১৯ দিন পর ২ জুন সীমা নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় প্রযুক্তির সহায়তায় সাইফুল ইসলাম নামে স্বপনের এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।”
পরে জিজ্ঞাসাবাদে ৬ জুন স্বপনের খনিজনগরের বাড়ির পাশ থেকে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় সীমার লাশ পুলিশ উদ্ধার করে বলে জানান ওসি।
ওসি রিয়াজ উদ্দিন বলেন, “মঙ্গলবার সকালে সাভারের সীমান্তবর্তী কুল্লা ইউনিয়ন থেকে স্বপনকে একটি পিস্তল ও ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে স্বপনকে নিয়ে তার বাড়ির মেঝে প্রায় সাত ফুট খনন করে তোফাজ্জলের মাথার খুলি ও হাড় উদ্ধার করা হয়।”
নিহত তোফাজ্জল হোসেনের বোন পূর্ণিমা বেগম বলেন, “স্বপন আনন্দপুর সিটিলেন এলাকার বাড়িতেই থাকতো। আমার ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সে ওই বাসা ছেড়ে চলে যায়। তখন বিষয়টি পুলিশকে বারবার জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”
তোফাজ্জলের চাচা উসমান গণি বলেন, “গত বছরের ১৯ এপ্রিল আমার ভাতিজা তোফাজ্জল নিখোঁজ হয়। এর আগের দিন মাদক কারবারি স্বপন মিয়া ও তার সহযোগীদের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়েছিল; এরপর থেকে সে নিখোঁজ হয়।”
নিখোঁজের পর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ২১ এপ্রিল সাভার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
উসমান বলেন, “এক বছর পর মঙ্গলবার স্বপনের ঘরের ভেতর থেকে তোফাজ্জলের কঙ্কাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। হাড়গোড়ের পাশ থেকে জামাকাপড় উদ্ধার হয়েছে। আমরা নিশ্চিত হয়েই বলছি, এসব কাপড় আমার ভাতিজার।”
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান খান বলেন, “এর আগে স্বপনের নেতৃত্বে সাইফুল, রেজাউল, তাইরান, ও আসিফ মিলে সীমাকে হত্যা করে। স্বপনকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার ঘরের মেঝে খুঁড়ে কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।
“কঙ্কালের সঙ্গে থাকা কাপড়-জামা দেখে স্বজনরা সেটি তোফাজ্জলের বলে সনাক্ত করেছেন। এরপরও ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। স্বপন একজন সিরিয়াল কিলার ও মাদক কারবারি।”