বিদ্যুতের আটটি খুঁটি উপড়ে পড়েছে এবং সাতটি ট্রান্সমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় তিনশ স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা।
Published : 30 May 2024, 09:31 PM
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় চারটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীতে বিধ্বস্ত হয়েছে সাত শতাধিক ঘরবাড়ি। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রামে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার খালিশাচাপানী, নাউতারা, ঝুনাগাছচাপানী এবং গয়বাড়ি ইউনিয়নের উপর দিয়ে চার থেকে পাঁচ মিনিটের ওই ঝড় বয়ে যায় বলে জানান সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা। ঝড়ে গাছ ও ঘর চাপা পড়ে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তারা।
আহতদের মধ্যে আছেন- সাইদুল ইসলাম (৬০), মিনতি রানী (৪৫), ওয়াহেদ আলী (৪৫), রমিজা বেগম (৩৬), একরামুল (৩৫), সুধা রানী (২৮), কোহিনুর বেগম (২০), হাবিবুর (৯) ও প্রিতম (৫)।
নাউতরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আশিক ইমতিয়াজ মোর্শেদ মনি বলেন, চার থেকে পাঁচ মিনিট স্থায়ী ওই ঝড়ে তার ইউনিয়নের আকাশকুড়ি, নিজপাড়া, কাকড়া, সাতজান ও শালহাটি গ্রামের তিন শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
“অধিকাংশ ঘরবাড়ির চাল ও বেড়া উড়ে গেছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে দেড় শতাধিক পরিবার। ছোটবড় অসংখ্য গাছপালা উপড়ে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পড়েছে।
“এছাড়াও বেশ কয়েকটি স্থানে খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। ”
তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অস্থায়ী বসবাসের জন্য তাঁবু ও পলিথিন প্রদান করা হয়েছে।
খালিশা চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সহিদুজ্জামান সরকার বলেন, “ঝড়ে আমার ইউনিয়নের বাইশপুকুর গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ছোটখাতা, ডালিয়া গ্রামে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই তিন গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবারের আড়াই শতাধিক কাঁচা ও আধাপাকা ঘর ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে।
“ঝড়ে গাছ ও ঘর চাপা পড়ে বেশ কজন আহত হয়েছে। এছাড়াও একটি ছাগল ও একটি গরু মারা গেছে। ঘরবাড়ির উপরে উপড়ে পড়া গাছপালা সরাতে কাজ করছে ডিমলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মীরা।”
গয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইবনে ফয়সাল চৌধুরী মুন বলেন, “ঝড়ে আমার ইউনিয়নের দক্ষিণ গয়াবাড়ি গ্রামের ভেন্টিয়াপাড়া, চেয়ারম্যান পাড়া, নয়া জামায়াত পাড়ার শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।”
ঝুনাগাছ চাপানীর ইউপি চেয়ারম্যান মো. একরামুল হক বলেন, “ঝড়ে আমার ইউনিয়নের ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি, উত্তর সোনাখুলিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
এসব এলাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। সরকারি সহায়তার জন্য তালিকা উপজেলা প্রশাসনে পাঠানো হবে বলেও জানান জনপ্রতিনিধিরা।
ডিমলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ মো. মোজাম্মেল হক বলেন, “বেলা সাড়ে ১২টার জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা বাইশপুকুর, ছোটখাতা, ডালিয়া গ্রামে ছুটে আসি। তিন গ্রামেই অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়ে রাস্তাঘাট ও মানুষের বসতবাড়ি উপর পড়ে রয়েছে। সেগুলো অপসারণ করা হচ্ছে।”
এ বিষয়ে বিকালে নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান বলেন, “ঝড়ে ওইসব এলাকায় বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনের আটটি খুঁটি উপড়ে পড়ে এবং সাতটি ট্রান্সমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় তিনশ স্পটে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের তার ছিঁড়ে গেছে।”
“এসব মেরামতের কাজ চলমান আছে। অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মেজবাহুর রহমান বলেন, “ঝড়ে যেসব এলাকায় মানুষের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেইসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে।”
এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা হাতে পেলে রাতেই জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে পাঠানো হবে। তার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এদিকে বুধবার রাত পৌনে ২টার দিকে সৈয়দপুর পৌর শহরের আমিন মোড় এলাকার উপর দিয়ে বয়ে গেছে বৃষ্টির সাথে ঝড়। এ সময় পুরোনো কয়েকটি গাছ উপড়ে আটটি বসত ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ১২টি দোকান ঘরের চাল ও বেড়া উড়ে গেছে। এতে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর পৌরসভা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল মো. জোবায়দুর রহমান শাহিন বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণসহ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের সরকারি সহযোগিতা প্রদানের জন্য পৌর প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে।”