পরে শ্রমিকেরা সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করলে বেলা পৌনে ১১টা থেকে যান চলাচল শুরু হয়।
Published : 28 Sep 2024, 12:17 PM
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে একটি কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এতে দুই ঘণ্টার বেশি সড়কটি যান চলাচল বন্ধ ছিল।
শনিবার সকালে যমুনা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান যমুনা ডেনিমস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ সহকারী পুলিশ সুপার (কোনাবাড়ী জোন) জাহাঙ্গীর আলম।
সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, কারখানাটির (উৎপাদন ফ্লোরে) কর্মরত ২২৫ জন স্টাফ (ডিস্ট্রিবিউটর, সুপারভাইজার, ইনচার্জ) ১৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের একটি অংশও সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়।
শনিবার কারখানায় প্রবেশ না করে সকাল ৮টা থেকে তারা প্রধান ফটক সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে শ্রমিকেরা সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করলে বেলা পৌনে ১১টা থেকে যান চলাচল শুরু হয়।
শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবিগুলো হলো- চলতি মাসের বেতনের সঙ্গে সব স্টাফদের স্থগিত হওয়া বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের মোট বেতনের ১০% পরিশোধ করতে হবে, ২০২৩ সালের প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী বাড়ানো বেতন (ডিসেম্বর থেকে অগাস্ট) প্রদান করতে হবে, সব স্টাফদের এবং শ্রমিকদের বকেয়া ছুটির টাকা চলতি মাসের বেতনের সঙ্গে পরিশোধ করতে হবে।
শ্রমিকদের চেয়ে স্টাফদের বেতন বৈষম্য করা যাবে না, সুপারভাইজারদের বেতন সর্বনিম্ন ৩৩ হাজার টাকা, লাইন চিফের বেতন সর্বনিম্ন ৩৮ হাজার টাকা এবং ইনচার্জদের বেতন সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা করতে হবে, এটি সেপ্টেম্বর মাস থেকে কার্যকর করতে হবে।
স্টাফদের ছুটির দিনে কাজ করানো হলে একদিনের হাজিরা দিতে হবে। সব শ্রমিকদের হাজিরা বোনাস ৯০০ টাকা, সন্ধ্যা ৭টার পর সব শ্রমিক এবং কর্মচারীদের টিফিন বিল ৫০ টাকা এবং ১১টার পর ডিউটি করলে নাইট বিল ১০০ টাকা দিতে হবে।
সপ্তম কর্মদিবসের মধ্যে স্টাফ এবং শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে হবে, চাকরির বয়স ছয় মাস হলে বেসিক সমপরিমাণ ঈদ বোনাস দিতে হবে, সব স্টাফ এবং শ্রমিকদের কর্ম দক্ষতা অনুযায়ী প্রমোশন দিতে হবে।
প্রতি তিন মাস পর পর কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের মাধ্যমে গ্রেড পরিবর্তনের সিস্টেম আবার চালু করতে হবে। তিনদিন লেট করলে সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হাজিরা এবং হাজিরা বোনাস কর্তন করা যাবে না, পূর্ব নির্ধারিত নোটিশ ছাড়া শ্রমিক কর্মচারীদের জোরপূর্বক চাকুরিচ্যুত করা হলে শ্রম আইন অনুযায়ী ১২০ দিনের (৪ মাস) বেতনসহ সার্ভিস বেনিফিট নগদ পরিশোধ করতে হবে।
কোনো শ্রমিক, কর্মচারী অসুস্থ বা মৃত্যু হলে তাদের চিকিৎসার খরচসহ বাড়িতে লাশ পাঠিয়ে দাফনের জন্য খরচ কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে বহন করতে হবে, কর্মরত অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত ভুল এবং মেশিনের যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে বেতন কর্তন করা যাবে না।
প্রত্যেক ঈদে মোট ১২ দিন করে ছুটি দিতে হবে, কাজ না থাকার অযুহাতে ছুটি দিলে ওই ছুটি অন্যান্য দিনের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করা যাবে না।
কোনো অভিযোগ ছাড়া ছাঁটাইকৃত পুরনো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুনরায় নিয়োগ দিতে হবে। আন্দোলনরত কোনো শ্রমিক, কর্মচারিদের ছাঁটাই করা যাবে না।
এসব দাবির বিষয়ে প্রশাসন বিভাগের মহা ব্যবস্থাপকের (জিএম) উপর কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করা যাবে না বলেও শ্রমিকদের দাবির মধ্যে আছে।
এ বিষয়ে যুমনা ডেনিমস লিমিটেডের কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার সেলিম রেজা সাংবাদিকদের বলেন, “আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে ৮-১০ জনকে কারখানার সভা কক্ষে এসে তাদের দাবিগুলো নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
“কিন্তু তারা আমাদের প্রস্তাব না মেনে কারখানার প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করছে। সকাল থেকেই তারা শ্রমিকদেরকে কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়নি।”
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ অবস্থান করছে বলেও জানান তিনি।