ওই নারীর স্বামী বলেন, “আমি ঢাকায় চাকরি করি। মা প্রায়ই নির্যাতন করতেন বলে আমার স্ত্রী আমাকে ফোনে বলত।”
Published : 31 Jan 2024, 04:58 PM
তিন শিশুকন্যাকে নিয়ে বিষ খেলেন এক গৃহবধূ। তাদের মধ্যে ছোট মেয়ে গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
হাসপাতালটির চিকিৎসক সাবিকুন নাহার বলেন, “গতকাল রাতে মা ও তিন মেয়েকে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ছোট মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। অন্যরা চিকিৎসাধীন। নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না যে তারা আশঙ্কামুক্ত।”
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লংকারচর গ্রামের বাড়িতে মঙ্গলবার বিকালে তিন কন্যাকে নিয়ে বিষয় খাওয়ার বিষয়টি নিজেই জানিয়েছেন ওই গ্রামের টিটু মোল্লার স্ত্রী পলি বেগম।
১০ বছর আগে টিটু মোল্লার সঙ্গে একই উপজেলার খাগড়াবাড়ি গ্রামের শরিফুল শেখের মেয়ে পলি বেগমের বিয়ে হয়।
হাসপাতালের ৮তলার মহিলা ওয়ার্ডের শয্যায় শুয়ে ওই গৃহবধূ বলেন, “আমি মারা গেলে আমার তিন মেয়ে সকলের অযত্ন-অবহেলায় বেঁচে থাকবে; কষ্টের শেষ থাকবে না। তাই আমার সাথে এদেরও নিয়ে যেতে চাই। এই দুনিয়া আমার কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছে। আমি আর এই দুনিয়ায় থাকতে চাই না। আমার মেয়েদেরও রাখতে চাই না। এত মানসিক নির্যাতন আর সহ্য করতে পারি না।”
শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল তার।
হাসপাতালের সপ্তম তলায় শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল টিটো-পলি দম্পতির তিন মেয়ে- দেড় বছর ব্য়সি মিম, আড়াই বছর বয়সি আমেনা ও আট বছর বয়সি আফসানা।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতেই ছোট মেয়ে মিমের মৃত্যু হয়। দুই মেয়ে ও মা পলি বেগম ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিষ খাওয়ার বিষয়ে পলি বেগম বলেন, “আমার স্বামী বাড়িতে থাকেন না। মেয়েদের নিয়ে আমি গ্রামে থাকি। বিয়ের পর থেকেই শাশুড়ি আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন।”
তার বাবার নয়টি বিয়ে করা নিয়ে শাশুড়ি প্রায়ই তাকে কথা শোনাত।
পলি বেগমে কাছে স্বামী টিটো মোল্লা নিতান্তই ভালো মানুষ। কিন্তু শাশুড়ির নির্যাতনের কথা স্বামীকে জানালেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
তাই তিনি কয়েকদিন আগে মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন, সন্তানসহ আত্মহত্যা করার। তিনদিন আগে জমিতে দেওয়ার কথা বলে পাশের বাজার থেকে বিষ কিনে ঘরে এনে রাখেন।
ওই গৃহবধূর দাবি, বরাবরের মত মঙ্গলবারও শাশুড়ি তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। এক পর্যায়ে বিকালে ঘরে রাখা বিষ চামচ দিয়ে তিন মেয়েকে খাইয়ে নিজেও খেয়েছেন।
কিছুক্ষণ পর চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হলে রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য গোপালগঞ্জের শেখ সোহরা খাতুন মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই ছোট মেয়ে মিমের মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে পলি বেগমের স্বামী টিটো মোল্লা বলেন, “আমি ঢাকাতে স্কয়ার কোম্পানিতে চাকরি করি। স্ত্রী তিন মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি থাকেন। আমার মা প্রায়ই স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন। স্ত্রী আমাকে ফোনে বলত।
“গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে আমাকে বলেছেন, মা তাকে নানাভাবে নির্যাতন করছেন। আমি ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে দুপুরেই রওনা হই। পথে এসে জানতে পারি, আমার স্ত্রী তিন মেয়েকে নিয়ে বিষ খেয়েছেন। ছোট মেয়ে মারা গেল। অন্য দুই মেয়ের কী হয় আল্লাহই জানেন। আল্লাহ যেন আমার দুই মেয়েকে ও স্ত্রীকে সুস্থ করে দেন।”