মেডিসিন ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্জ মো. মহসিন বলেন, “স্যালাইন চাহিদার অর্ধেক পাওয়া যাচ্ছে।”
Published : 23 Aug 2023, 09:26 AM
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বরিশাল নগরীর ওষুধের দোকানে স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে; এতে ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন সংশ্লিষ্টরা। কোথাও কোথাও বেশি দামে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অপরদিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাহিদার তুলনায় ‘অর্ধেক’ স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অন্তত ১০টি ওষুধের দোকান ঘুরে জানা গেছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের জন্য প্রথমে ইনফিউশন (এনএস) স্যালাইন দিতে হয়। সেই স্যালাইনের সংকট আছে। ‘নরমাল স্যালাইন’ হিসেবে পরিচিত এ স্যালাইনের সরবরাহ একেবারেই স্বল্প।
নুবা ড্রাগ হাউজের মালিক সোহেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০ দিন ধরে নরমাল স্যালাইন নেই। কোথাও পাওয়া যায় না। হাসপাতালেও সরবরাহ কম। যাদের কাছে আছে তারা একটু বেশি দামে বিক্রি করে।”
তবে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল সম্প্রতি বলেন, “বেসরকারিভাবে হয়ত স্যালাইনের সমস্যা হতে পারে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে সমস্যা থাকার কথা নয়। রোগী বাড়ার কারণে হয়ত একটু সমস্যা হতে পারে। আমরা চাহিদা পাঠিয়েছি। সমস্যা থাকবে না।
পরিচালক আরও বলেন, “প্রত্যেক হাসপাতালে বলে দিয়েছি। ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি যেন না থাকে। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
সারাদেশে ডেঙ্গু রোগী প্রায় ১০ গুণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্যালাইন সংকটের বিষয়টি সামনে আসে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকও মানিকগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে স্যালাইন সংকট কাটাতে আমদানির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “স্যালাইনের এখন বিশেষ প্রয়োজন, সারাদেশে যারা স্যালাইন তৈরি করে তাদের বলেছি শতভাগ উৎপাদনে যাওয়ার জন্য। হঠাৎ করে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব নয়। প্রতিদিন আমাদের ৪০ হাজার ব্যাগ স্যালাইন লাগে, সেই ক্ষেত্রে মাসে ১২ লাখ ব্যাগ স্যালাইন লাগে। সব কোম্পানি মিলেও এতো উৎপাদন করতে পারে না।”
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের দোকানিদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নরমাল স্যালাইন উৎপাদন করে থাকে পপুলার, অপসোনিন, বেক্সিমকো, ওরিয়ন ও একমি। তাদের কাছ থেকে চাহিদামত স্যালাইন না পাওয়ার কথা জানান তারা।
সেখানকার রাহাত মেডিকেল হলে গিয়ে স্যালাইনের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মচারী রানা জানান, বর্তমানে নরমাল স্যালাইন (এনএস), এইচএস, ডিএনএস ও ০.৫ ডিএ প্রয়োজন। এর মধ্যে নরমাল স্যালাইন সংকট রয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে তিনি বলেন, তাদের আজ মাত্র এক কেস সরবরাহ করা হয়েছে। দোকান খোলার পর মুহূর্তের মধ্যে সেই স্যালাইন বিক্রি হয়ে গেছে।
“নরমাল স্যালাইনের দাম ৯০ টাকা। শুনেছি, অনেকে বেশি দামেও বিক্রি করে। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে বলে শুনেছি।”
দোকানের অপর কর্মচারী সাকিব বলেন, “শুনেছি, কিছু ফার্মেসি ঢাকা থেকে স্যালাইন এনে বিক্রি করে। তাই একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।”
কথা বলার সময় কর্মচারী রানা এই প্রতিবেদককে বলেন, “একটু সময় অপেক্ষা করেন। দেখবেন কতজন স্যালাইন নিতে আসে।”
ফার্মেসিতে ১০ মিনিট অবস্থানের মধ্যে চারজন ক্রেতা হন্যে হয়ে এসে জানতে চাইলেন, নরমাল স্যালাইন আছে কি-না? নেই বলার পর তারা হতাশ হয়ে অন্য দোকানের দিকে ছুটে যান।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা থেকে ডেঙ্গু রোগী নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মো. হোসেন। তিনি তার বন্ধুর স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন। হাসপাতালে ভর্তি পর স্যালাইন নিতে পাঠিয়েছেন। কিন্তু স্যালাইন পাচ্ছেন না তিনি।
এর মধ্যে স্যালাইন খুঁজতে গিয়ে ক্লান্ত ও হতাশ রোগীর স্বজন উজ্জ্বল। তিনি দোকানের কর্মচারীদের কাছে জানতে চাচ্ছিলেন, “কোথা গেলে পাব বলতে পারেন?”
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, মেডিসিন ভবনের নীচতলা থেকে চারতলায় হাঁটার মত অবস্থা নেই। যে যেখানে একটু স্থান পেয়েছে, সেখানে বিছানা পেতে শুয়ে আছেন।
মেডিসিন ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্জ মো. মহসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্যালাইন চাহিদার অর্ধেক পাওয়া যাচ্ছে। একজন রোগী ভর্তি হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতাল থেকে স্যালাইন দেওয়া হয় না। ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর তাকে স্যালাইন সরবরাহ করা হয়। নতুন ভর্তি হলে বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়।
তাই রোগীরা সংকটের কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেন মহসিন। তিনি বলেন, “প্রত্যেক দিন একজনকে একটি করে স্যালাইন সরবরাহ করা হয়।”
ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ইউনিটের সেবিকা নিপা বিশ্বাস বলেন, “প্রতিদিন একজন রোগীকে একটি করে নরমাল স্যালাইন দেওয়া যায়। কিন্তু একেকজনের প্রতিদিন চারটি করে প্রয়োজন। সেটা কিভাবে দেওয়া যাবে?
“গত কয়েকদিন ধরে নরমাল স্যালাইনের তো কোনো সরবরাহ ছিল না। এখন যা আসছে খুবই কম। রোগীর তুলনায় স্যালাইন সরবরাহ কম।
নিপা আরও বলেন, “অনেক গরিব রোগী আছে। তাদের ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। তাদের জন্য তো কিছু রেখে দিতে হয়।”
ডেঙ্গু সচেতনতায় প্রচার
ডেঙ্গুসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সর্বসাধারণের মাঝে প্রচারপত্র (লিফলেট) বিতরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচার চালাচ্ছেন বরিশাল জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে পথসভাও করা হয়।
প্রচারপত্র বিতরণ ও পথসভায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “দেশের অন্যান্য স্থানের মত বরিশালেও এবারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। আর এটি মোকাবেলায় সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের বার্তাই আমরা প্রচার করছি।
এ সময় তিনি সবাইকে ঘরবাড়ি ও আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানান।