“২০ হাজার ঘের মালিকের জন্য ১০ লাখ লোকের জীবন-জীবিকা বিসর্জন দেওয়া যায় না। অবৈধ ঘের সরাতে হবে,” বলেন উপদেষ্টা।
Published : 10 Nov 2024, 10:37 PM
যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার জন্য স্থানীয়রা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করায় এবার ভুক্তভোগীদের প্রত্যাশা মত সমস্যা সমাধানের কথা বললেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রোববার তিনি জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করে এ কথা বলেন।
এ সময় স্থানীয়রা তার কাছে পাউবো কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ, সাবেক সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-লুটপাটের অভিযোগ করেন।
এজন্য তাদের কী পরিমান দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাও তুলে ধরেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত প্রকল্পের কারণে গত শতাব্দীর আশির দশকে যশোরের মণিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর, খুলনার ডুমুরিয়া, সাতক্ষীরার তালা অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও বিশাল অঞ্চলটির জলাবদ্ধতা নিরসন করা যায়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পানি সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, “ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যা অনেক পুরনো। এই সমস্যা সমাধানে এ যাবৎ কী কী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, আমরা সেগুলো খতিয়ে দেখব। দুর্নীতি-অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “এখন আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কথামত প্রকল্প নেওয়া হবে না। ভুক্তভোগী জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া হবে। কিছু আছে শর্টটার্ম কার্যক্রম, যাতে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দ্রুত দাঁড়ানো যায়। আরেকটি হল দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা, যাতে ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়।”
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান এদিন সকালে যশোর শহর থেকে ভবদহের পানি নিষ্কাশনের জন্য খনন করা অভয়নগরের আমডাঙ্গা খালে যান।
সেখানে তার কাছে স্থানীয়রা তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।
জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বছরের পর বছর ধরে যে সমস্যার সমাধান হয়নি, রাতারাতি তা সমাধান করা যাবে না। সবাইকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।”
এরপর তিনি অভয়নগরের সুন্দলী এলাকায় যান। সেখানে স্কুলের ছাত্রীরা জলাবদ্ধ সমস্যা সমাধানের দাবি তোলেন। গ্রামবাসীও তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
পরে তিনি যান অভয়নগর ও মণিরামপুরের মধ্যবর্তী ভবদহ বাজারে।
সেখানে তিনি এক্সকেভেটর দিয়ে হরি নদী খনন ও পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
তিনি স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ‘ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির’ সমাবেশে বক্তব্য দেন।
সমাবেশে রিজওয়ানা বলেন, “আমডাঙ্গা খাল প্রশস্ত করে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। যেসব নদী দিয়ে এখানকার পানি বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে, সেগুলো খনন করা হবে। ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ভুক্তভোগী মানুষের চাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবার আর মতামত আরোপ করতে পারবে না।”
এনজিওর ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত এবং ত্রাণ সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলে এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “ভবদহ জলাবদ্ধতা সংকট কারিগরি দিক দিয়ে অনেক জটিল হয়ে গেছে। আগের প্রকল্পগুলো মূল্যায়নের পাশাপাশি নতুন কার্যক্রম যাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়, তা মাথায় রাখা হবে।”
“অবৈধ ঘের মালিকদের উদ্দেশে আমার স্পষ্ট বার্তা হল, যেটা অবৈধ সেটা অবৈধই। প্রচলিত আইন মেনেই ঘেরে মাছের চাষ করতে হবে। ২০ হাজার ঘের মালিকের জন্য ১০ লাখ লোকের জীবন-জীবিকা বিসর্জন দেওয়া যায় না। অবৈধ ঘের সরাতে হবে,” বলেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা।
উপদেষ্টার জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শনকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যাণার্জী, ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালী ছিলেন।
আরও পড়ুন: