নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নগরীর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসতে দেখা যায়নি।
Published : 14 Aug 2024, 01:25 PM
কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ এক মাস বন্ধ থাকার পর খুলেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে প্রথমদিনে বুধবার ময়মনসিংহের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল একবারেই কম।
এছাড়া সকাল ৯টা থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নগরীর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসতে দেখা যায়নি।
সকাল ৮টা ৪০মিনিটে সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় তিনজন শিক্ষার্থী বাহিরে খেলাধুলা করছে। স্কুলের সব দরজা-জানালাও ছিল বন্ধ।
শিক্ষার্থী সাকিব হাসান বলে, “৯টায় ক্লাস শুরু হবে। কিন্তু স্যাররা এখনো না আসায় আমরা খেলাধুলা করছি।”
পরে ৮টা ৫০মিনিটে গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দুই-তিনজন শিক্ষার্থীর দেখা পাওয়া গেলেও পাওয়া যায়নি কোনো শিক্ষককে।
অভিভাবক সেবিকা রানী বলেন, “৯টা থেকে ক্লাস শুরু কিন্তু একজন শিক্ষক ও তিন ছাত্র এসেছে। ক্লাস হয় কি না বুঝতেও পারছি না।”
তবে পরে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে যথাসময়ে না আসার বিষয়টি অস্বীকার করে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নাসরিন জাহান বলেন, “আমরা ঠিক ৯টার দিকে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছি। তিন ক্লাসে আজকে ৩০ জনের মত শিক্ষার্থী হয়েছে। ”
তিনি আরও বলেন, “বিদ্যালয় সংলগ্ন আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস ও মন্দির থাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। তবে আতঙ্ক দূর করতে নির্দেশনা এসেছে, আমরা চেষ্টা করছি উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য।”
এদিকে ৯টা ১০মিনিটের দিকে শাখারী পট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কয়েকটি ক্লাসে ৫-৭ জন করে শিক্ষার্থী পাওয়া যায়।
তাদের মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ৫০জনের বিপরীতে ক্লাসে এসেছে সাতজন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৪০জনের বিপরীতে ক্লাসে পাওয়া যায় ছয়জনকে।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক লিপি রানী কর বলেন, “স্কুল খুললেও মানুষের মধ্যে আতংক কাটেনি। যার কারণে উপস্থিতি সংখ্যা কম। উপস্থিতি বাড়াতে হোম ভিজিট করা হবে।”
দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মান্যকর বলে, “অনেকদিন পর স্কুলে এসেছি, ভালো লাগছে। প্রথম দিন হওয়ায় অনেকে আসেনি। স্কুল বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন একটু বেশি করে পড়াশোনা করতে হবে।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ১৬ জুলাই শিক্ষার্থী-পথচারীসহ ছয়জনের প্রাণ যায়। উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে সেদিন রাতেই সারা দেশে স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিকসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পরদিন সকালে ৮টি বিভাগীয় শহরের সিটি করপোরেশন এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়। পরিস্থিতির অবনতি হলে পরে সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দেয় সরকার।
প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পরদিন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৭ অগাস্ট থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশনা দেয়।
কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা না আসায় অনেক স্কুল খোলা হয়নি। শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে ফেরেনি।
পরে মঙ্গলবার এক আদেশে বুধবার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পুরোদমে চালুর নির্দেশনা দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জল হোসেন বলেন, জেলায় ৪ হাজার ১৪০টি সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, “স্কুল খোলার প্রথমদিন হলেও শিক্ষকদের কারও দেরি করে প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার বা অনুপস্থিত থাকার সুযোগ নেই। খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”