বিষয়টি স্বীকারও করেন নগরবাড়ী-কাজীরহাট পোর্ট কর্মকর্তা আব্দুল ওয়কিল।
Published : 16 Jun 2024, 12:09 AM
পাবনার কাজীরহাট-আরিচা নৌরুটে ফেরিতে কোরবানির পশুবাহী ট্রাকসহ সব ধরনের পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও এদিকে ঘাট কর্তৃপক্ষের নজর নেই।
ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগের সহজ মাধ্যম কাজীরহাট-আরিচা ফেরি ঘাট।
তীব্র যানজট, সময় ও অতিরিক্ত অর্থ বাঁচাতে এই রুট ব্যবহার করে প্রতিদিন ঘাটটি দিয়ে শত শত পরিবহন পারাপার হয়। এই সুযোগে পরিবহন ও সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
বিআইডব্লিউটিসির নিয়ম অনুযায়ী বড় ট্রাকের ভাড়া ২ হাজার ৬৫০ টাকা। কিন্তু নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। সাধারণ ট্রাক ২ হাজার ৪০ টাকার স্থলে ২ হাজার ৭০০ টাকা, মিনি ট্রাক ১ হাজার ৫৫০ টাকার স্থলে ২ হাজার ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
যানবাহনের অতিরিক্ত ওজনের জন্য বাড়ে অর্থের পরিমাণও।
সবকিছু অতিক্রম করে নির্ধারিত ভাড়া স্লিপে লেখা থাকলেও টিকিট কাউন্টারে গুনতে হচ্ছে এ অতিরিক্ত টাকা।
ফেরি পারাপারের জন্য প্রতিটি পরিবহন থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি দিতে হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
এমনকি সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে ৩৬ টাকার ভাড়ার পরিবর্তে নেওয়া হয় ৫০ টাকা।
পরিবহন শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, এই ঘাটটি অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, শুধু কম সময়ে এবং ঝামেলাহীনভাবে যাতায়াতের জন্য। এখন দেখা যাচ্ছে, এসব চাঁদা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে খরচের মাত্রা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাধ্য হয়ে রুট পরিবর্তন করতে হবে।
এদিকে, প্রতিটি যানবাহনের জন্য আলাদা করে ঘাটশুল্ক (টোল) ৭৫ টাকার পরিবর্তে নেওয়া হচ্ছে দেড়শত টাকা।
বিষয়টি স্বীকারও করেন নগরবাড়ী-কাজীরহাট পোর্ট কর্মকর্তা আব্দুল ওয়কিল।
তিনি বলেন, “বিষয়টি আমরা মৌখিকভাবে শুনেছি, তবে কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ না দেওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
তবে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন পাবনা কাজীরহাট বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক মো. ফয়সাল।
তিনি বলেন, “পাথর বোঝাই ট্রাকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজন হলে তাদের টাকা বেশি দিতে হয়।”
কিন্তু অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়টি টিকিটে উল্লেখ থাকে না কেন জানতে চাইলে তিনি এর সদুত্তর দিতে পারেননি।
পাবনা বেড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, “অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সুযোগ নেই, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো, সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিআইডব্লিউটিসির তথ্যমতে, এই রুটে প্রতিদিন প্রায় সহস্রাধিক যানবাহন পারাপার হয়।
ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম ছিল কাজীরহাট- আরিচা নৌরুট। কিন্তু সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল অংশ নিয়ে ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু সেতুটি ১৯৯৮ সালে ২৩ জুনে চালুর পর থেকে কাজীরহাট-আরিচা নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে সরকার বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর চাপ কমানোর জন্য নৌ-রুটে পুনরায় ফেরি চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরে গত ২৭ জানুয়ারি ২০২১ সালে চারটি ফেরি দিয়ে নৌ-রুটটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ।